আওয়ামী লীগের মন্ত্রী -নেতাদের জন্য ৫ সতর্কবার্তা

আওয়ামী লীগের 'চেইন অব কমান্ড'

আওয়ামী লীগের 'চেইন অব কমান্ড'

নির্বাচনের আগ দিয়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এবং নেতাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা, বেসামাল বক্তব্য সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলছে। বিভিন্ন নেতা তার দায়িত্বের বাইরে গিয়ে নানা বিষয়ে অবান্তর কথাবার্তা বলছেন, যে কথাবার্তাগুলো আওয়ামী লীগের নীতি এবং সিদ্ধান্তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই যেমন কদিন আগে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা আমির হোসেন আমু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের কথা বলেছিলেন। আবার তার কিছুদিন আগে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে একেক মন্ত্রী একেক ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। জামায়াত ইসলামের সমাবেশ করা নিয়েও মন্ত্রীদের বক্তব্যের কোন সামঞ্জস্য নেই। এরকম পরিস্থিতিতে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল, মন্ত্রী এবং নেতাদের কথাবার্তা বলা সহ বিভিন্ন কাজের জন্য পাঁচটি সতর্কবার্তা দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের এই নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ইতিমধ্যেই মন্ত্রী এবং নেতাদের কাছে কথা বলার আগে বিষয়গুলোকে সুস্পষ্ট জেনে-বুঝে করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। 

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মন্ত্রী এবং নেতাদের জন্য পাঁচটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। এ সতর্কবার্তা; 

১. হঠাৎ করেই দেশের রাজনীতি বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করা: জামায়াত ইসলাম, বিএনপি বা খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে না জেনে শুনে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বক্তব্য রাখা যাবে না। দলে এ ধরনের বক্তব্য রাখার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে। অন্যরা রাজনৈতিক বিষয়ে বক্তব্য রাখতে পারবেন। তবে সেটি হতে হবে দলীয় সিদ্ধান্তের আলোকে। যেমন- বিএনপির সমালোচনা করা, সরকারের উন্নয়নের কথা বলা ইত্যাদি বিষয়ে মন্ত্রী এবং নেতারা অবাধে কথাবার্তা বলতে পারবেন। কিন্তু অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে মন্ত্রী এবং নেতাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। 

২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক নিয়ে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মন্ত্রী-নেতারা যার যা ইচ্ছা বক্তব্য রাখতে পারবেন না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যে সুনিদিষ্ট অবস্থান সে অবস্থানের আলোকে নেতাকর্মীদেরকে বক্তব্য রাখতে হবে। 

৩. যখন তখন কোন কূটনীতিকদের সাথে সাক্ষাৎ না করা: আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এবং কিছু কিছু নেতার মধ্যে এখন দূতাবাসে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এসব দূতাবাসে যাওয়া এবং কূটনীতিকদের সাথে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে তারা দলীয় শৃঙ্খলা গুলো মানছেন না। আওয়ামী লীগের এমন সব নেতারা বিভিন্ন দূতাবাসে নৈশভোজে যাচ্ছেন বা আলাপ-আলোচনায় যাচ্ছেন যে সমস্ত আলাপ-আলোচনা এবং বৈঠকের কথা কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা জানছেন না। এক্ষেত্রে দলের সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি ছাড়া কোন নেতা কোন দূতাবাসে যেতে পারবেন না বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

৪. কোন বিতর্কিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা: নির্বাচনের আগে স্পর্শকাতর কোন বিষয়ে কোনো বিতর্কিত মন্তব্য করা থেকে মন্ত্রী নেতাদেরকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা যেন হুটহাট করে কোন বিতর্কিত ইস্যু উত্থাপন না করে। যেমন- জামায়াতের ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতার বক্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। 

৫. বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা: শেষ মেয়াদে এসে সরকার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড যেমন- দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, এলাকায় ক্ষমতার দাপট দেখানো ইত্যাদি প্রবণতা থেকে নেতা এবং মন্ত্রীদেরকে দূরে থাকার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। মন্ত্রী এবং নেতাদেরকে বলা হয়েছে, এখন যদি আরও বিরুদ্ধে এলাকায় বা মন্ত্রণালয়ে কাজে কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আসে সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে এবং এতে যদি তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বা দোষ প্রমাণ হয় সেক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে তার মনোনয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। 

এ সমস্ত নির্দেশনাগুলোর ফলে আওয়ামী লীগের 'চেইন অব কমান্ড' অনেকটা ফিরে আসবে বলেই মনে করছেন দায়িত্বশীল মহল। 

   


পাঠকের মন্তব্য