বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান

শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ হবে আফগানিস্তান 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশ নিয়ে এখন বিশ্ব রাজনীতিতে নানামুখী তৎপরতা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানামুখী চাপ প্রদান করছে। বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক হয় তা নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক বিভিন্ন প্রস্তাব এবং সুপারিস দিচ্ছে। তাদের সর্বশেষ অবস্থান হল নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা। 

নতুন ভিসানীতিকে প্রথমে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানালেও এখন আওয়ামী লীগ এই ভিসানীতির বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে কথা বলছে। এরকম পরিস্থিতিতে আগামী ২১ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ২২ জুন তার একান্ত বৈঠক হবার কথা আছে। এছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেবেন। এই সময় তিনি বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়েও কথা বলবেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে।

নরেন্দ্র মোদি বা ভারতের অবস্থান বাংলাদেশ নিয়ে কি ? ভারতের থিংকট্যাংকরা বলছেন বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান তিনটি।

প্রথমত, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের নানা ত্রুটি বিচ্যুতির পরও এই সরকার এখনো অসাম্প্রদায়িক চদেতনা লালন করে এবং একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকে তাহলে বাংলাদেশ আরেকটি আফগানিস্তানে পরিণত হবে। ভারতের থিংকট্যাংকরা মনে করেন বাংলাদেশে মৌলবাদ, উগ্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী এখনও সক্রিয় রয়েছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নানা রকম মদদ এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। এমনকি বিএনপি’র সঙ্গেও এ সমস্ত সাম্প্রদায়িক উগ্র  শক্তির সম্পর্ক রয়েছে বলেও ভারতের একাধিক থিংকট্যাংক মনে করেন। আর এ কারণেই এই মুহুর্তে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় না থাকে তাহলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির দ্রুত উত্থান ঘটবে। এটি ভারত চায় না।

দ্বিতীয়ত, ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে বা এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে এমন কোন পদক্ষেপ কোন রাষ্ট্রেরই নেয়া উচিত না। সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে।

বাংলাদেশে যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত না হয় সে ক্ষেত্রে এ দেশের গণতন্ত্র ব্যাহত হবে এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। এ জন্য সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের ধারা অব্যাহত রাখা উচিত।

তৃতীয়ত, ভারতের থিংকট্যাংকরা মনে করেন যে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নানা ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে, নানা সমস্যা রয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলেরই সহযোগিতা করা উচিত।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া একটি নিরন্তত ধারা। প্রতিনিয়ত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্র এগিয়ে যায়। কাজেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই অপসৃত হবে এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যেন বিকশিত হয় সে জন্য সকলের সহযোগিতা করা উচিত। চাপ দিয়ে বা কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় কখনও গণতন্ত্রকে বিকশিত করা যায় না। আর এই বক্তব্যগুলোই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদির কাছে থিংকট্যাংকরা পৌঁছে দিয়েছেন।

নরেন্দ মোদি জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে থিংকট্যাংকদের এই বক্তব্যের আলোকেই কথা বলবেন কিনা সেটি একান্তই তার বিষয়। তবে থিংকট্যাংকরা মনে করে বাংলাদেশে এই মুহুর্তে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হবে এই অঞ্চলের জন্য আত্মঘাতী। 

   


পাঠকের মন্তব্য