ভারতের সমর্থন আদায়ে কেন পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি ? 

ভারত কেন বিএনপিকে চায় না ?

ভারত কেন বিএনপিকে চায় না ?

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা যতটা না বেশি- তার চেয়ে বেশি উত্তেজনা কূটনৈতিক পাড়ায়। কূটনৈতিক মহল এখন দ্বিধা-বিভক্ত। একদিকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে, নানামুখী চাপ দিচ্ছে। 

অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনকে এ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে অভিহিত করছে এবং বর্তমান সরকারের উপর বাড়াবাড়ি রকমের চাপ প্রয়োগ যাতে না হয়- তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও দেন-দরবার করছে। এ রকম পরিস্থিতিতে একটি বিষয় স্পষ্ট- তা হলো, ভারত বাংলাদেশে এখনও আওয়ামী লীগের বিকল্প কাউকে ভাবছে না। বিশেষ করে বিএনপিকে ভারত এখন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক দল মনে করে না। 

নানা কারণেই ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্তরে রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ ভারত। তাছাড়া ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশীও বটে। বাংলাদেশে যদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অশান্তি তৈরি হয়- সেটি ভারতেও আক্রান্ত হয়। আবার যদি ভারতীয় অর্থনীতি এগিয়ে যায়- সেটি বাংলাদেশের জন্যও ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হয়। বর্তমানে ভারত সরকারের নীতি হলো প্রতিবেশী প্রথম। এই নীতির কারণেই বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের রাজনৈতিক নীতি-নির্ধারক মহল এবং থিঙ্কট্যাংকদের একটি সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট অবস্থান রয়েছে। 

ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যেমন হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয় বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে। তেমনি ভারত কখনোই চায় না যে, বাংলাদেশে এমন একটি রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক- যাতে দুই দেশের সম্পর্ক এবং উপমহাদেশে স্থিতিশীলতা বিপন্ন হবে। 

ভারতের থিঙ্কট্যাংক এবং বিভিন্ন নীতিনির্ধারক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথাবার্তায়- এটা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, ভারত এই মুহূর্তে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের বিকল্প ভাবে না। কেন ভারত বিএনপিকে চায় না ? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে কূটনৈতিক মহল চারটি কারণ পেয়েছে- 

১. অতীত অভিজ্ঞতা: ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতা করেছিল বিএনপি। তারেক জিয়া ভারতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে গিয়ে তিনি গ্যাসচুক্তি করবেন এমন অঙ্গীকার যেমন করেছিলেন, তেমনি অঙ্গীকার করেছিলেন যে বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনো স্থান দেয়া হবে না। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তারেক জিয়া সেই সমস্ত অঙ্গীকারগুলো পালন করেনি। কাজেই ভারত এখন বিএনপিকে বিশ্বাস করতে পারে না অতীতের কারণে। 

২. বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক : ভারত মনে করে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে। এটা একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে বলে ভারত মনে করে। এ নিয়ে ভারতের অতীত অভিজ্ঞতা অনেক তিক্ত। অতীতে যে দলই ক্ষমতায় এসেছে- তারা ভারতীয় বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে ঠাঁই দিয়েছে। বাংলাদেশে তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং ভারতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ভারতের অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছিল। সেই পরিস্থিতি ফিরে আসুক- এটি ভারত কখনোই চায় না। 

৩. সাম্প্রদায়িকতার উত্থান: ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশে যদি উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী এবং ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে- সেটি ভারতের জন্য বিপজ্জনক। বাংলাদেশ একটি আফগানিস্তান হয়ে ওঠুক- এটি ভারত কখনোই চায় না। আর এ কারণেই বিএনপিকে তারা পছন্দ করে না। কারণ বিএনপি’র মধ্যে এখনও উগ্র, সাম্প্রদায়িক শক্তির বসবাস রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলেই তারা মনে করে।  

৪. সম্পর্কের ধারাবাহিকতা: ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশ এবং ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছে। এই সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ধারাবাহিকতা দরকার। আর এ কারণেই বিএনপি ভারতের বিবেচনায় এখন ভালো বিকল্প নয়। 

   


পাঠকের মন্তব্য