নন্দীগ্রামে নজর কাড়ছে কৃষি অফিসের ছাদ কৃষিলার্নিং সেন্টার

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আদনান বাবু

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আদনান বাবু

শুধু ছাদ বাগান নয়, বরং ছাদবাগানের ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে বগুড়ার নন্দীগ্রামের কৃষি অফিসের ছাদে স্থাপিত ছাদ কৃষি লার্নিং সেন্টার। নিয়মিত কৃষি সেবা প্রদানের পাশাপাশি উদ্ভাবনী উদ্যোগ হিসেবে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আদনান বাবু এই সেন্টারটি পরিচালনা করছেন। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী ঘোষনা প্রতি ইঞ্চিজায়গা আবাদের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সকলকে উৎসাহিত করা এবং ছাদ কৃষিকে জনপ্রিয় করাই এটির অন্যতম লক্ষ্য।এক সময়ের খালি ছাদ এখন দৃষ্টিনন্দন ছাদ কৃষির আওতায়। এখানে বিভিন্ন ধরনের দেশী-বিদেশী ফল, ফুল, সবজি ও শোভাবর্ধনকারী গাছ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাগানো হয়েছে। প্রতিটি গাছের সাথে বাংলা নাম, ইংরেজিনাম এবং বিশেষ গুনাগুণ/বৈশিষ্ট্যসহ নেমপ্লেট লাগানো রয়েছে। যেখানে একজন দর্শনার্থী একা একা ঘুরে ঘুরেই নানা কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জানছেন এবং  শিখছেন। 

এছাড়াও রয়েছে ছাদ কৃষি শুরু করার প্রাথমিক করনীয় ডিসপ্লে বোর্ড এবং প্রাথমিক উপকরণ কর্ণার যেখানে যেকোন দর্শনার্থী খুব সহজেই বিভিন্ন উপকরণ সম্পর্কে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান লাভ করতে পারছেন। এছাড়াও পরিত্যক্ত বোতলে পেঁয়াজ চাষ, খালি বস্তা ব্যবহার করে খুব সহজেই আদা,হলুদ চাষের অভিনব প্রযুক্তি গুলোও এখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে। 

এই কৃষি লার্নিং সেন্টারে রয়েছে হরেক রকমের ফুল ও ফলের গাছ। যেমন, ফুলেরকর্ণারে শোভাছড়াচ্ছে পয়েনসেটিয়া, অ্যাজিলিয়া, সিজিয়াম, রজনীগন্ধা, পিটুনিয়া, গাঁদা, বেলী, নয়নতারা, কমলা রঙ্গন, লাল রঙ্গন, জবা, স্থল পদ্ম, বাগানবিলাস, পাতাবাহার, ক্যাকটাস, পর্তুলিকাসহ আরো অনেক। ফলের কর্ণারে রয়েছে বার মাসি আম, কাঠাল, অগ্নিশ^রকলা, থাই পেয়ারা, দেশীমাল্টা, আমড়া, কামরাঙ্গা, লেবু, কদবেল, জাম্বুরা, সুইট লেমন,সরিফাসহ নানা প্রজাতির ফলগাছ। বিদেশী ফল গাছের উপস্থিতি ও চোখে পড়ার মতো। 

রয়েছে ড্রাগন, কমলা, চাইনিজকমলা, ভেরিগেটেড মাল্টা ইত্যাদি। ছাদ কৃষির পাশাপাশি মাঠ কৃষিরও নানা প্রযুক্তি এখানে রয়েছে। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে মাছি পোঁকা দমন, হলুদ আঠালো ফাঁদের ব্যবহার করে সহজেই উড়ন্ত পোঁকা দমন, পেয়ারা, ডালিমের ব্যাগিং তাদের মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন কৃষক প্রশিক্ষণে কৃষকদেরকে তত্ত্বীয়জ্ঞান প্রদানের পাশাপাশি বাস্তবভিত্তিক জ্ঞানলাভের জন্য এই সেন্টারটি ঘুরে ফিরে দেখিয়ে কৃষির নানা আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে প্র্যাকটিক্যাল ধারণা প্রদান করা হয় কৃষকদের পাশাপাশি প্রতিদিনই এখানে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ অনেকেই আসছেন এবং তাদেরকে ছাদ কৃষিসহ কৃষির নানা প্রযুক্তি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। 
 
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আদনান বাবু জানান, এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক সেবাগ্রহীতা সেন্টারটি পরিদর্শন করেছেন।তারা এই সেন্টারটি ঘুরে ঘুরে দেখেছেন এবং মুগ্ধ হয়ে নিজেরাও ছাদ কৃষি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নন্দীগ্রামে ইতোমধ্যে বুড়ইল বাজারের তাপস কুমার, গোপাল পুরের সুকুমার, বড় চাঙ্গুইরের আবুল কালাম, নাগড়া গ্রামের মহসিন আলী, ভাটরা গ্রামের আরিফ হোসেনের বাড়ীর ছাদসহ ২৫টি বাড়ীর ছাদে এই সেন্টারের আদলে ছাদ কৃষির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

   


পাঠকের মন্তব্য