এবি ব্যাংকের ঋণপ্রাপ্ত কৃষকদের এবারের ঈদ হবে আনন্দময়

মিয়া মনসফ, কলামিস্ট ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা।

মিয়া মনসফ, কলামিস্ট ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা।

মিয়া মনসফ : বাংলাদেশের মানুষ উৎসব প্রিয় জাতি। যার যতটুকু সাধ্য আছে তা নিয়ে বছরের বিশেষ দিনগুলো পরিবার নিয়ে উৎসবে মাতে। বছরের এমন দুটি উৎসবের দিন হচ্ছে দু’টি ঈদ। যে কারণে এই দিন দুটোর উৎসবের কথা বিবেচনায় এনে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের যেমন বেতনের সাথে বোনাসের ব্যবস্থা করা হয, তেমনি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও বোনাসের প্রচলন আছে। কিন্তু এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ শ্রমিক দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার মানুষরা তো বোনাস পায়না। তাদের দৈনন্দিন আয় রোজগার থেকে তাদের সংসার চলে। সাধ্যানুযায়ী উৎসবের দিনগুলো পালন করে থাকে। 

এদেশের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী। কেউ নিজের জমিতে ফসল ফলায়, আবার কেউ পরের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে জীবন নির্বাহ করে।  এদেশের কৃষক এমনিতেই টাকার অভাবে জমিতে চাষাবাদ করতে পারেনা। তাদের কিভাবে ঈদোৎসব হয়! পরিবার নিয়ে ঈদের আনন্দ করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু তারা সেই উৎসব করার প্রয়োজনীয় অর্থ না পেলেও তারা পরিবার পরিজন নিয়ে যা আছে তা দিয়ে উৎসব করার চেষ্টা করে। তাতেই তারা  সন্তুষ্ট। যদি অর্থ কষ্ট থাকে, জীবন চলেনা অর্থাভাবে । সেক্ষেত্রে তাদের ঈদের আনন্দ  উপভোগ করার কোন উপায় নাই।

এবছর এবি ব্যাংক থেকে যে সকল প্রান্তিক কৃষক স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ পেয়েছে তারা ভাগ্যবান বটে! তাদের এবারের ঈদ আনন্দময় ও উৎসবমুখর হবে! তা অনুমান করতে পারি। 

আমার বেশ কয়েকটি জেলায় এবি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কর্মসূচি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। কথা বলেছি ঋণ পাওয়া অনেক কৃষক কিষাণীর সাথে। কোন জামানত ছাড়া এবি ব্যাংকের স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে ঋণ পাওয়া ছিল স্বপ্নে মতো। তারা কল্পনাই করতে পারেনি এতো সহজে ব্যাংকের ঋণ পাওয়া যায়। এবি ব্যাংক স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ দিয়েছে কৃষকদের। ঋণ বিষয়ে কৃষক কিষানীদের সাথে যখন কথা বলেছি, কেউ কেউ জানতে চেয়েছে ঋণ পেতে কত খরচ লাগতে পারে। যখন বলেছি এক টাকাও লাগবেনা তখন ঋণ প্রত্যাশীদের মুখের অবয়ব দেখে বুঝতে পেরেছি আমার কথা তারা বিশ্বাস করতে পারছেনা! বিশ্বাস করারও কথা নয়, এদেশের ব্যাংক থেকে ঋণ পাবার কথা ভাবা মানে হচ্ছে ঘুষ লাগবেই।

কিন্তু এবি ব্যাংক থেকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে এ পর্যন্ত যে দেড় সহস্রাধিক কৃষক কিষাণী ঋণ পেয়েছেন তারা কোন ঘুষ বা ঝক্কি ঝামেলা ছাড়া ঋণ পেয়েছেন। ঋণ পাবার সাথে সাথে তারা ঐ টাকা কাজে লাগিয়েছেন কৃষি কাজে। ঋণ পাবার পর কেউ জমিতে ধান ও অন্যান্য ফসলের আবাদ করেছেন। কেউ হাস মুরগী ও পশু পালনে ব্যবহার করেছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে  মধ্য জুন পর্যন্ত যে সকল কৃষক কিষাণী ঋণ পেয়েছেন তারা ইতিমধ্যে ঋণের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছেন। তাহলে নিশ্চয়ই ঋণ পাবার পর থেকে ঋণপ্রাপ্ত কৃষকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে। 

যে সকল কৃষক ঋণ নিয়ে কৃষি কাজ শুরু করেছেন তাদের সাথে কথা বলে একটি বিষয় অনুধাবন করেছি, ব্যাংকের ঋণ যথাসময়ে ফেরত দেবার বিষয়ে তারা অত্যন্ত সতর্ক। অথচ আমাদের দেশের বড় বড় ঋণ গ্রহীতারা ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ফেরত না দেবার নীতি গ্রহন করে। কিন্তু এদেশের সহজ সরল কৃষকরা ব্যাংকের টাকা ফেরত না দেবার মানসিকতা পোষণ করেনা। তারা প্রাপ্ত ঋণ দ্রুত কৃষি কাজে ব্যবহার করে উৎপাদনের কথা ভাবে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে আগে ব্যাংকের ঋণের কিস্তির টাকা শোধ দেবার কথা আগে ভাবে। তারপর নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণ করে। 

কোরবানীর আগে এবি ব্যাংক যে দু’টি জেলায় ঋণ বিতরণ কর্মসূচি ছিল, সেই দুটি জেলা হচ্ছে দিনাজপুর ও বগুড়া জেলা। দু’টি জেলার কৃষক কিষাণীদের সাথে কথা বলার পর বুঝতে পেরেছি এবি ব্যাংকের ঋণ প্রাপ্তির ফলে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কৃষি উৎপাদন করতে পারবে এবং যথাসময়ে ঋণ ফেরত দিয়ে আরো ঋণ পাবার প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে যে সকল কৃষক কিষাণী এবি ব্যাংকের ঋণ পেয়েছেন তারা সেই টাকা সাথে সাথেই কৃষি কাজে লাগিয়ে ফসল বিক্রি করে  লাভবান হয়েছেন, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। গত বছরের মতো নিশ্চয়ই এবছর কোন দুশ্চিন্তা ছাড়াই ঈদের আনন্দ করবেন এবি ব্যাংকের ঋণপ্রাপ্ত কৃষকরা! আমরাও তা প্রত্যাশা করি। যে কৃষক এদেশের ষোল কোটি মানুষের মুখের খাবার যোগাতে দিন রাত পরিশ্রম করে।  নিজের জমিতে চিকন ধানের আবাদ করেও নিজে মোটা চালের ভাত খায়। এই সহজ সরল মানুষগুলো তাতেই সন্তুষ্ট। একসময়  বীজের অভাবে, সারের অভাবে, টাকার অভাবে কৃষকের জমি অনাবাদী পড়ে থাকতো। এখন তা হয়না। কৃষককে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে উৎপাদন বাড়ানো গেলে এতে শুধু কৃষকেরাই লাভ নয়! আমরা সবাই লাভবান হই। 

এ দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষির সাথে জড়িত। আবাদযোগ্য পতিত জমি আছে চার লক্ষ একত্রিশ হেক্টরের মতো। এই জমি যদি চাষের আওতায় আনা যায় আমাদের খাদ্যাভাব অনেকাংশে কমে যাবে। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে সহযোগিতা করা দরকার কৃষকদের। দেশের কথা, দশের কথা, বিশ্ব পরিস্থিতি কথা বিবেচনায় রেখে খাদ্য নিরাপত্তা তৈরী করার কোন বিকল্প নাই । এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসকারী পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি সরব থাকতে হবে, কৃষি উৎপাদনে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে আমাদের কৃষক ভালো থাকবে। দেশের মানুষ খাদ্যাভাবের মুখোমুখি হবেনা। 

শুধু এবি ব্যাংক কৃষকদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসলে হবেনা। চল্লিশের অধিক বেসরকারী ব্যাংক আছে এদেশে। এ ছাড়া অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে যারা এদেশের কৃষি ও কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে এগিয়ে আসতে পারে। কৃষি উৎপাদন বাড়লে আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। আমাদের খাদ্যাভাব দূর হবে। কৃষকদের জীবনমান উন্নত হবে। ঈদ পার্বনে শুধু আমি উৎসব করবো প্রতিবেশিরা উৎসবে শামিল না হলে এ উৎসবের কোন মূল্য নেই।  আমাদের প্রতিটি দিনকে উৎসবের দিন বানাতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে বত্রিশ কোটি হাতকে কাজে লাগাতে হবে। 

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার কাছে আমার দেশের সবচেয়ে দামী মানুষ কৃষক। কৃষক অতি কষ্টে ফসল ফলায়, সেই ফসল আমাদের মুখে তুলে দেয় কৃষক, এই কৃষকই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। তাই বঙ্গবন্ধু এই কৃষককে দেশের সবচেয়ে দামী মানুষ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন।

আসুন সবাই মিলে এবি ব্যাংকের মতো কৃষকদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি। কৃষকদের সহযোগিতা করে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। সব শেষে প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে এই ঈদে আনন্দোৎব হোক, এ প্রত্যাশা আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের।

লেখক : কলামিস্ট ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা।

   


পাঠকের মন্তব্য