ফেসবুক লাইভে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ড. রেজা কিবরিয়া 

ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুর

ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুর

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন দলটির সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাতে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদ যুবসমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এ উদ্যোগকে বাঁচাতে নুরুল হক নুরের হাতে এ দলটাকে ছেড়ে দেয়া যাবে না। কারণ সে এ চেতনাকে বিক্রি করেছে, ব্যবসা করেছে আর নিজে ধনী হয়েছে।

নিজের অবস্থান বিষয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘দেশের জন্য আমার বাবা প্রাণ দিয়েছেন। এটা অনেকেই জানেন। আমি নিজে বড় চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি মানুষের জন্য কাজ করার জন্য। আমার বেতনের পরিমাণ নির্বাচন কমিশনের স্টেটমেন্টে পাবেন। নুর অভিযোগ করেছেন, আমি ৩ লাখ টাকা বেতনে ইনসাফ কায়েম কমিটির হয়ে কাজ করেছি। এটা হাস্যকর। আমি রোজগার করেছি ৩৯ বছর। নুরুল হক নুর কতদিন করেছে, হালালভাবে এ হিসাবটা তার দেয়া দরকার।’

তিনি বলেন, ‘টাঙ্গাইলে আক্রমণের সময় নুর পুলিশি হেফাজতে, পুলিশের গাড়ির মধ্যে বসে ছিল। পুলিশ তার অনেক যত্ন নিয়েছে- এটা খুব ইন্টারেস্টিং। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা খতিয়ে দেখা দরকার। সরকার, পুলিশ ও ডিজেএফআইয়ের সঙ্গে নুরের কী সম্পর্ক-এটা নিয়ে অনেক সন্দেহ মানুষের মধ্যে আছে।’

বিএনপি ভাঙা নিয়ে কোনো ইন্টারেস্ট নেই উল্লেখ করে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘বিএনপিকে আমি ভাঙতে চাই—এটা নুর বলে বেড়াচ্ছে। বিএনপি ভাঙা নিয়ে আমি কাজ করি না। আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি বিএনপির মিটিংয়ে যাই, সেখানে সরকারবিরোধী বক্তব্য রাখি এবং ইসলামী আন্দোলনের মিটিংয়েও সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়েছি।’

নুরের লেনদেনে অস্বচ্ছতা বিষয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘টাকা-পয়সার প্রতি লোভটা বারবার সে প্রমাণ করেছে। আমরা মনে করি, ভবিষ্যতে এ দলটাকে যদি কোথাও পৌঁছাতে হয়, নুরুল হক নুর সঙ্গে থাকলে হবে না। নুর আমার ওপর রেগে গেছে দুই কারণে। একটা হলো টাকা-পয়সা লেনদেনের স্বচ্ছতায় ওর কিছু সমস্যা আছে। এটা অনেক আগে থেকেই। ২০১৮ সালের আন্দোলনে ওর সঙ্গে যারা ছিল তারা জানে টাকা-পয়সার বিষয়ে ওর স্বচ্ছতার অভাব আছে।’

এ ছাড়া বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করা কারও সঙ্গে রাজনীতি করতে চান না বলেও লাইভে জানান রেজা কিবরিয়া। 
তিনি বলেন, ‘আমি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের সঙ্গে কাজ করতে চাই না। আমি বিদেশি দালালদের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করতে আসিনি। গণঅধিকার পরিষদকে সব ধরনের বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব থেকে রক্ষা করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত রাখতে আমি বদ্ধপরিকর। দলের অর্থনৈতিক লেনদেনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।’

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে নুরের বৈঠক ও সরকারের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মোসাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কী এ প্রশ্ন করা হলে নুর তার পরিষ্কার উত্তর দেননি। একটা মিটিং সম্পর্কে আমরা জেনেছি। সেখানে টাকার লেনদেন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নুর বলেছে এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।’

রেজা কিবরিয়া আরও বলেন, ‘দেশে যখন সে ফেরত এলো তাকে কিছু করা হলো না। এটাতে আমাদের সন্দেহ জাগলো। যেখানে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী মেন্দি সাফাদির সঙ্গে একটা কনফারেন্সে দেখা করে শুধু ছবি তুলেছিলেন। সেই অপরাধে এখনো তিনি জেলে আছেন। সেখানে নুরকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়নি। সে কার জন্য কাজ করছে, যে এ ধরনের প্রটেকশন তার আছে। এ রকম প্রকাশিত অপরাধে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।’

সংগঠনের আগামী দিনের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে গণঅধিকার পরিষদকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। সব কার্যক্রমে ব্যক্তিকে প্রাধান্য না দিয়ে, দলীয় গঠনতন্ত্রকে প্রাধান্য দেব। এক মাসের মধ্যে উচ্চতর পরিষদ গঠন ও কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আসবে বলে জানান তিনি।

   


পাঠকের মন্তব্য