বিএনপির আন্দোলনের কৌশল নিয়ে তারেক-ফখরুলের দ্বন্দ্ব 

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও তারেক রহমান

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও তারেক রহমান

আন্দোলনের কৌশল নিয়ে তারেক-ফখরুলের দ্বন্দ্ব এখন চরম আকার ধারন করেছে। একদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের নির্দেশের বাইরের কোনো কিছু করতে নারাজ। 

অন্যদিকে তারেক জিয়া জ্বালাও-পোড়াও করে বাংলাদেশকে অচল করে দিতে চায়। আর এ দুইয়ের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটেই বিএনপি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারছে না। 

বিএনপি নেতারা এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামীকাল শ্রক্রবার বাদ জুম্মা বিএনপি গণমিছিল করবে। কিন্তু এই গণমিছিলে তারেক জিয়ার মতামত নেই। গতকাল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে লন্ডন থেকে যুক্ত হন তারেক জিয়া। 

আন্দোলনের পরবর্তী কৌশলের ধরন কি হওয়া উচিৎ- এ নিয়েই নেতারা আলোচনায় বসেন। আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কথা ছিল তাদের। বিশেষ করে শুক্রবারের পদযাত্রা কর্মসূচির পর নতুন কর্মসূচি যেন ঘোষণা করা হয়, সেজন্যই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারেক-ফখরুল দ্বন্দ্বে এই বৈঠক চূড়ান্ত হয়নি। 

সাধারণত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারেক জিয়ার একান্ত অনুগত হিসেবেই কাজ করেন। তারেক জিয়ার নির্দেশের বাইরে তাকে সচরাচর যেতে দেওয়া হয় না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কূটনৈতিকদের সাথে সম্পর্কের উন্নতির পর ফখরুল এখন তারেক জিয়ার চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন, তারেক জিয়ার অনেক বক্তব্যের সঙ্গেই একমত হচ্ছেন না- যার প্রমাণ পাওয়া গেল গতকাল স্থায়ী কমিটির সভায়। বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে সাঁড়াশি আন্দোলনের উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন যে, আন্দোলনকে আরও হিংস্র করতে হবে। সারাদেশকে অচল করে দিতে হবে। 

জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে আন্দোলন করতে হবে। এটাই প্রতিবাদের ভাষা। তিনি বলেন, কয়েকটা লাশ না পড়া পর্যন্ত সরকারের টনক নড়বে না। 

কিন্তু তারেক জিয়ার এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত হলেন না মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বরং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন যে, কূটনৈতিকরা কোনোভাবেই  এই ধরনের আন্দোলনকে সমর্থন দিবে না এবং এ ধরনের কর্মসূচি যদি ঘোষণা করা হয়, তবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে কূটনৈতিকদের সমস্ত সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে এবং আওয়ামী লীগ এক তরফা নির্বাচন করার সুযোগ পাবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে অন্তত তিন জন স্থায়ী কমিটির নেতা কথা বলেন। কিন্তু তারেক জিয়া বললেন অন্য কথা। 

তিনি বললেন, আন্দোলন জমাতে না পারলে বিদেশিরাও দাম দিবে না। বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির মতো কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে এখনই। এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা না করতে পারলে, সরকারকে চাপে ফেলা যাবে না। আর সরকার চাপে না পড়লে আন্দোলনেও জয়ী হওয়া যাবে না। 

এ রকম তর্ক- পাল্টা তর্কের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠক। আজ আবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি নেতারা অবশ্য বলছেন, তাদের আন্দোলনের কৌশল সবকিছুই চূড়ান্ত করা আছে। তারা ১৫ই আগস্টের পর থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচির দিকে এগিয়ে যাবে। 

তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির মধ্যে এখন একটি চক্র তৈরি হয়েছে, যারা কূটনৈতিকদের ইশারায় চলছে। তারা বিএনপি, আওয়ামী লীগ কেউ না, তারা তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

   


পাঠকের মন্তব্য