দেড় কোটি প্রবাসী ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত 

সব নাগরিকের ভোটের অধিকার

সব নাগরিকের ভোটের অধিকার

বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের ভোটের অধিকারের কথা বলা হলেও স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছরেও প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির মৌলিক এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ নিজ দেশের প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটি এখনো নিশ্চিত করতে  না পারায় দেশে ও প্রবাসে অন্তহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, দেশে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন নাগরিক ভোটার। তার মধ্যে প্রায় দেড় কোটির মত কর্মসূত্রে প্রবাসী, যা মোট ভোটারের প্রায় ১৫ শতাংশ। আসনভিত্তিক এই সংখ্যা যে কোনো আসনের ভোটের ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।

এদিকে, বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত অনেক প্রবাসীরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। কিন্তু পাসপোর্টধারী এমন প্রবাসীও কম নন। তাদের ভোটার করতে কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু তেমন অগ্রগতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসী ভোটার করার উদ্যোগটি হাতে নেয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মধ্যে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তী সময়ে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপে প্রবাসীদের জন্যও এই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কার্যক্রমটির তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

যদিও গেল ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার পরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট গ্রহণের বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে এই বিজ্ঞপ্তিকে 'কাগুজে উদ্যোগ' বলে মন্তব্য করেছেন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী জেবেল।

এমন পরিস্থিতিতে ভোট দেয়ার সুযোগ বঞ্চিত হওয়ায় যুক্তরাজ্য থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার আন্দোলনের আহ্বায়ক কে এম আবু তাহের চৌধুরী। ইতালি প্রবাসী শাহাদাত হোসাইন বলেছেন, 'কাগুজে প্রচারণা' করলে কখনো ভোটাধিকারের সুযোগ পাবেন না প্রবাসীরা। 

তবে নির্বাচন বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতী'র প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেছেন, ভোটাধিকার আদায়ে পোস্টাল ব্যালট সত্যিকারের চালু করতে প্রবাসীদের সরকারের ওপর আরো বেশি চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

আর সৌদি আরব প্রবাসী, জেদ্দায় ওআইসি’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিছবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে এখন অনেক, তাই ই-ভোটিং চালুর সময় এসেছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যেতে পারে।

একই মন্তব্য কাতার প্রবাসী ব্যবসায়ী নেতা শাহ আলম খানের। কানাডার টরেন্টো থেকে কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট পারভেজ আহমেদ মহিদ বলেছেন, উন্নত বিশ্বে অনলাইন ভোটিং এখন খুব জনপ্রিয়। সময় অর্থ যেভাবে বাঁচে, একই সাথে এই প্রক্রিয়া করতে পারলে ভোটের কারচুপিও কমে আসে বলে মনে করেন তিনি।

   


পাঠকের মন্তব্য