ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অমর একুশে পদক বিতরণী অনুষ্ঠানে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে বাঙালিরা রক্ত দিয়েছে, রক্তের অক্ষরে ভাষার অধিকারের কথা লিখে গিয়েছে।

তিনি আরও বলেছেন, "পাকিস্তানি শাসকরা যখন আমাদের মায়ের ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আমরাই ছিলাম বেশি। আর যে ভাষাটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, উর্দু, সেটা কারও মাতৃভাষা নয়, পুরো পাকিস্তানের ৭ ভাগ লোকও এটা ব্যবহার করত কি না, সেটাই প্রশ্ন। অথচ আমরা বাঙালিরা ছিলাম প্রায় ৫৫ ভাগ। আমাদের ভাষা কেড়ে নিয়ে দ্বিজাতীয় একটা ভাষা যখন চাপিয়ে দিতে চায়, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তমদ্দুন মজলিশসহ আরও কয়েকটি সংগঠন নিয়ে বাংলা ভাষাকে রক্ষার জন্য সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন এবং আন্দোলন শুরু করেন। সেই আন্দোলনের পথ ধরেই আমরা আমাদের স্বাধিকার আদায় করেছি স্বাধীনতা পেয়েছি।"

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবচেয়ে দুঃখের কথা হলো ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে অবদান, সেই আন্দোলনের যে ইতিহাস, সেখান থেকেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামটা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে সারা বাংলাদেশ সফর করে মানুষকে যখন সংগঠিত করছিলেন তখনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দেশের প্রতিটি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান রয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, 'তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। পঁচাত্তরের পরে বিজয়ী জাতি হিসেবে সেই মর্যাদাটা বাঙালি হারিয়ে ফেলেছিল। আবার বাঙ্গালি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করতে পারে, সেই মর্যাদা আমরা ফিরিয়ে এনেছি। এই মর্যাদা সমুন্নত রেখে আমাদের আগামী দিনে এগিয়ে যেতে হবে। কারও কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা করে নয়। আত্ম মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব। কারণ একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথানত না করা। মাথানত করে আমরা চলব না, মাথা উঁচু করে চলব।'

সরকারপ্রধান বলেছেন, আমরা সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করি। এখানে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য যারা কাজ করেছেন তাদের আমরা সম্মান করার চেষ্টা করেছি। আজ যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের পুরস্কৃত করতে পেরে আমরা ধন্য হয়েছি।"

শেখ হাসিনা একটি দই বিক্রেতা জিয়াউল হকের প্রশংসা করেছেন যার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার ও স্কুল সরকারি করার আশ্বাস দিয়ে। তিনি বলেছেন, "তিনি জানি সমাজের জন্য কিভাবে যোগদান রাখতে হয়। এই মনোভাবে তিনি একটি পাঠাগার তৈরি করেন, সাধারণ মানুষের পড়াশোনার সুযোগ করে দেন, এবং একটি স্কুল তৈরি করে দেন।

শেখ হাসিনা একইভাবে উল্লেখ করেছেন, এখানে বিভিন্ন এলাকায় যারা সমাজের মানুষের জন্য করে যাচ্ছেন তাদের খুঁজে বের করার তাগিদ দেন।" তিনি এই মনোভাবে কাজ করার জন্য উদাহরণ হিসেবে একজন দই বিক্রেতা জিয়াউল হককে প্রশংসা জানান।

একইভাবে, শেখ হাসিনা একজন সমাজসেবিকা কাজের জন্য নিজেকে ত্যাগ করে একজন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড থেকে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন।

শেখ হাসিনা একইভাবে বলেছেন, 'আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বলছি না। আমি জাতির পিতার কন্যা হিসেবে বলছি। আমি প্রধানমন্ত্রী না হলেও যদি জানতাম তাহলে আমাদের মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড থেকে সহযোগিতা দিতাম। যারা জনগণের সেবা করে তাদের সেবা করতে পারাটা নিজেকে ধন্য মনে করা।'

এই ভাষণের মাধ্যমে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষা আন্দোলনে তার অবদান নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি এছাড়াও দেশের সমাজের উন্নয়নের কাজে যারা অবদান রেখেছেন, তাদেরকে সম্মান জানানোর চেষ্টা করেছেন।

   


পাঠকের মন্তব্য