রোহিঙ্গাদের জন্য ৭ হাজার কোটি টাকা অনুদান ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের এমডি আন্না বেজার্ড

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের এমডি আন্না বেজার্ড

বিশ্বব্যাংকের এমডি আন্না বেজার্ড বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ৬৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান ঘোষণা করেছেন। দুটি স্কিমে বিভক্ত এই তহবিলটির লক্ষ্য বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের চাহিদা পূরণ করা, অনুদানের শর্তে প্রদত্ত অর্থের অর্ধেক। বাংলাদেশের এই অর্থ ৭,১২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার সমতুল্য, রোহিঙ্গাদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলি দূর করতে এবং ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করতে চায়, যার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তা করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। বিশ্বব্যাংকের এমডি আন্না বেজার্ড, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। 

রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা: বিশ্বব্যাংক থেকে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ করা হবে। প্রায় অর্ধেক তহবিল অনুদানের শর্তে প্রদান করা হবে, মানবিক সহায়তার জন্য জরুরি প্রয়োজনের উপর জোর দেওয়া হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা: বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করা, যার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই অর্থনৈতিক মাইলফলক অর্জনে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বিশ্বব্যাংকের ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব: বিশ্বব্যাংক তার স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার, ৪১ বিলিয়নেরও বেশি অনুদান বা ভর্তুকিযুক্ত ঋণের অঙ্গীকার করেছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তা লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, একটি শক্তিশালী বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন: বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে আর্থিক খাতের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন অর্জনের স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্বব্যাংক দ্রুত এবং সাহসী রাজস্ব ও নীতি সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে।

শিক্ষা ও অবকাঠামোগত অর্জন: স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের প্রায় ১00% ভর্তি, বিদ্যুতের ব্যাপক প্রবেশাধিকার এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাংকের এমডি আন্না বেজার্ড দ্বারা স্বীকৃত। 

ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতি: বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেইসাথে স্বাগতিক সম্প্রদায়ের চাহিদা পূরণ না করা পর্যন্ত। সংস্থাটি বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্বের জন্য গর্ব প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যতের সংকট মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়নে দেশটিকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

বিশ্বব্যাংকের ৬৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং এর অর্থনৈতিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেয়। টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সংকট মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে অংশীদারিত্ব, দেশের স্বাধীনতার সময় থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবিকার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে বাংলাদেশের যাত্রায় অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

   


পাঠকের মন্তব্য