পাইকগাছায় মশার উপদ্রবে জনজীবন অতিষ্ঠ

পাইকগাছায় মশার উপদ্রবে জনজীবন অতিষ্ঠ

পাইকগাছায় মশার উপদ্রবে জনজীবন অতিষ্ঠ

পাইকগাছায় মশার উপদ্রবে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শীত শেষ, গরমের শুরু। মশার বিস্তার ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন রাতে সব সময় মশার কামড়ে নাজেহাল পৌরবাসী। কোনভাবেই কমছে না। দিনের বেলায়ও অফিস কিংবা স্কুল-কলেজ, বাসা বাড়িতে মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। আর একটু সন্ধ্যা হলেই মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে আরও কয়েক গুণ। কিন্তু মশা নিধনের জন্য প্রতি বছর বাজেট থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। শুধুই দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। 

দুর্ভোগ বাড়ছে পৌরবাসীর। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট, কথাও যেন নিস্তার নেই। পৌরবাসীর সাথে কথা বলে জানা গছে, ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথেই মশার উপদ্রব ব্যাবপকভাবে  বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাঘাত ঘটছে। কয়েল, স্প্রে বা মশারি টাঙিয়েও মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যা হতে না হতেই মশার উপদ্রব বেড়াই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও নিস্তার মিলছে না। ভ্যানচালক আল-আমিন, বিনোদরা বলেন, সন্ধ্যার পরে ভ্যান থামিয়ে কোথাও এক মিনিটও বসা যায় না। মনে হয় মশা তুলে নিয়ে যাবে। 

চার নম্বর ওয়ার্ডের গৃহবধূ অনিতা জানান, এক দু'মাস ধরে মশার উপদ্রব্যে তিনি অতিষ্ঠ। দিনরাত সাত মাসের সন্তানকে মশা থেকে বাঁচাতে মশারির ভিতর রাখতে হয়। মশার জন্য অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। বাচ্চাকে মশারির মধ্যে রেখেও রেহাই নাই। আমাদের এদিকে পৌরসভার মশা কর্মীদের দেখা যায় না। মশার কামড়ে পরিবারের সবার ত্বকে দাগ পড়ে গেছে।" 

শুধু এ দুই এলাকায় নয়, এরকম চিত্র পৌরসভার সর্বত্র। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকায় এ মশার উপদ্রব দেখা যায়। মূলত বিভিন্ন স্থানের জমে থাকা নোংরা পানি এবং যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা

ফেলায় অঞ্চলটি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। পৌর এলাকার ডাস্টবিন ও আবর্জনা ফেলার স্থান নিয়মিত পরিস্কার না করায় মশার বিস্তার ক্রমশ বাড়ছেই। আর এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, মশার উৎপাত ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সকাল সন্ধ্যা মশার কয়েল জ্বালিয়ে বা স্প্রে করে শিক্ষার্থীদের পড়তে বসতে হচ্ছে। এর উৎপাতে নাজেহাল হয়ে মশারি টাঙিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করছে। অনেকই মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। 

মানবাধিকার কর্মী অ্যাড. এফএমএ রাজ্জাক বলেন, দিনে রাতে সমানতালে উপদ্রব চালাচ্ছে মশা। পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে। মশা নিধনে কোনো কর্মসূচি চোখে পড়ে না। দেশজুড়ে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করলে পৌরসভায় ফটোসেশনে মশক নিধন অভিযান চালায়। মূলত এখানে কোনো কিছুই করা হয়নি। যদি মশা নিধনে এখনই কোনো ব্যাবস্থা নেয়া না হয় তাহলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ নানা সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। আসলে জনগণের প্রতি পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। 

এব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, এ সময় যে মশা দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে ৯৯% হচ্ছে কিউলেক্স মশা। যেটি আসলে এডিস মশা নয়। এ মশার সাধারণত পচা পানিতে হয়। নর্দমা, ড্রেন, ডোবা, বিলঝিলের পানি এখন পচে গেছে। পচা পানিতে জন্মাচ্ছে কিউলেক্স মশা। সেই সঙ্গে শীতের শেষে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কারণে এবং পানি প্রবাহ না থাকায় কিউলেক্স মশার জন্মানোর হার বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, শীতের শেষে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে যে মশার ডিম থাকে সেগুলো একযোগে ফুটে যায়। যার কারণে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। কিউলেক্স মশার কামড়ে অনেক সময় গোদরোগ হয়। যেটাকে ফাইলেরিয়াসিস বা 

এন্টিফ্যান্টিয়াসিসও বলা হয়। এটি হলে হাত-পা ফুলে যায়।' এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,নির্দিষ্ট কোন একটি কীটনাশক একটানা পাঁচ বছরের বেশি ব্যবহার করলে মশা সেই কীটনাশকের বিপক্ষে সহনশীলতা তৈরি করে। ওই কীটনাশকে আর কাজ করে না। এজন্যই মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি পাঁচ বছর পর পর কীটনাশক পরিবর্তন করা দরকার। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. নীতিশ চন্দ্র গোলদার ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুহা. কওসার আলী গাজী বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মশা বংশবিস্তার ঘটায়। এসময় মশার কামড় জনিত রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। মশার কামড়ে মানুষ অ্যানোফিলিস, ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এজন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে। 

   


পাঠকের মন্তব্য