সাংবাদিকদের আটক ও জেলে পাঠানোর হুমকি দিল এসিলেন্ড 

হুমকিদাতা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার

হুমকিদাতা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার

জমি খারিজ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়ায় লালমনিরহাটে পাঁচ সাংবাদিককে অফিসে আটকিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ)  দুপুর ১২টায় লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। প্রায় ৪০ মিনিট পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি.এম.এ মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অফিস গেটের তালা খুলে সাংবাদিকদের মুক্ত করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ওই সহকারী কমিশনার সাংবাদিকদের "দালাল" বলে অপমান করতে থাকেন। এসময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন তিনি। পরে সাংবাদিকরা সকলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পিছনে থাকা একটি টেলিভিশনের ক্যামেরা পার্সনের মোটরসাইকেল আটকিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমান করেন সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার।

এ ঘটনার পর সাংবাদিকরা শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশনমোড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন। দুপুর ২টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি.এম.এ মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অভিযুক্ত সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা অবস্থান তুলে নেন।

সাংবাদিকরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের তিনজন অফিস সহকারী ভূমি সংক্রান্ত শুনানি করছিলেন। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপস্থিত ছিলেন না। মাই টিভি ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক মাহফুজ সাজু এ শুনানির ভিডিও ধারন করেন। এতে অফিসের স্টাফরা ক্ষুদ্ধ হয়ে সহকারী কমিশনারকে ডেকে আনেন। সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের নির্দেশে অন্যান্য স্টাফরা সাংবাদিক মাহফুজ সাজুকে আটকিয়ে রাখে। এ খবর পেয়ে প্রেসক্লাব থেকে চার সাংবাদিক নিয়ন দুলাল, এসকে সাহেদ, ফারুক আহমেদ ও কাওছার আহমেদ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকেও অফিসে আটকে রাখেন তারা।

সাংবাদিক মাহফুজ সাজু বলেন, সেবা নিতে আসা লোকজনের সাথে খারাপ আচরণ করা হয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে। এ তথ্য জানতে এসে সত্যতা পাই। এসিল্যান্ড আমাকে অফিসে আটকালে আমি আমার সহকর্মীদের ফোন দিলে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এসিল্যান্ড তাদেরকেও অফিসে আটকিয়ে রাখেন। তিনি আরো বলেন, এসিল্যান্ড সাংবাদিক সম্পর্কে খুবই অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছেন। আমাদের জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন।

এশিয়ান টেলিভিশনের লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি নিয়ন দুলাল জানান, এসিল্যান্ডের সাথে অফিসের স্টাফরাও আমাদের গালিগালাজ করেন। এডিসি রেভিনিউ আমাদের মুক্ত না করলে এসিল্যান্ড আমাদের জেলে পাঠাতেন।

দৈনিক কালবেলা পত্রিকার লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি এসকে সাহেদ জানান, এসিল্যান্ড আমাদের সাথে খুবই বাজে আচরণ করেন। সাংবাদিক সম্পর্কে কুরুচি মন্তব্য করেন। সেবা নিতে আসা মানুষজনের সাথে খারাপ আচরণ করার তথ্য সংগ্রহ করায় তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুদ্ধ হন।

চ্যানেল আই টেলিভিশনের ক্যামেরা পার্সন আব্দুল মান্নান জানান, মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিলো। কিন্তু কাগজগুলো সঙ্গে ছিলো না। এসি ল্যান্ডের কাছে ১০ মিনিট সময় চাওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষুদ্ধ থাকায় কোন সময় দেননি। লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের আহবায়ক ও এটিএন বাংলা টেলিভিশন ও দৈনিক সমকাল পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন জানান, জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন। শনিবারের মধ্যে কোন ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সাংবাদিকরা আন্দোলনে যাবেন।

লালমনিরহাট সকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর গোলাম মোস্তফা জানান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষ জনের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করা হয়। আমার সাথে চরম খারাপ আচরণ করেছেন সহকারী কমিশনার। তিনি সরকারি অফিসটিকে পারিবারিক অফিস মনে করেন। সাংবাদিকদের অফিসে আটকিয়ে গালিগালাজ ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন উত্তর দেয়নি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি.এম.এ মমিন সাংবাদিকদের জানান, সহকারী কমিশনারের অনুপস্থিতিতে অফিস সহকারীরা কোন ভাবেই জমির খারিজ শুনানি করতে পারেন না। বিষযটি জেলা প্রশাসক খতিয়ে দেখছেন।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, তিনি পুরো ঘটনাটি আমার জানা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

   


পাঠকের মন্তব্য