বঙ্গবন্ধুর জন্ম বার্ষিকীতে যেভাবে জাতীয় শিশু দিবস প্রবর্তন হলো 

 যেভাবে জাতীয় শিশু দিবস প্রবর্তন

যেভাবে জাতীয় শিশু দিবস প্রবর্তন

মিয়া মনসফ : ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রত্যয় নিয়ে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৩রা আগষ্ট। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ৩০ জন বুদ্ধিজীবিদের উপদেষ্টা করে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে শিশু কিশোরদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। “ইতিহাসের সন্ধানে নতুন প্রজন্ম” কর্মসূচীর আওতায় শিশু কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার কর্মসূচী প্রতিষ্ঠাকাল থেকে চলে আসছে। তম্মধ্যে ড. নীলিমা ইব্রাহিম প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা প্রবর্তিত বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস অন্যতম।

বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার উপদেষ্টা, পৃষ্ঠপোষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে ২য় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালের ২ নভেম্বর। ২য় কনভেনশনে উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা ছিলেন তারা হলেন- মোঃ জিল্লুর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন, বিচারপতি কে এম সোবহান, শওকত ওসমান, এম আনিসুজ্জামান, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, কবি শামসুর রাহমান, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, কলিম শরাফী, ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য, আলহাজ্ব মোহাম্মদ জহিরুল হক, খ ম হারুন, কবরী সারোয়ার, ড. ইনামুল হক, লাকী ইনাম, কবি রফিক আজাদ, রাহাত খান, আসাদ চৌধুরী, সেলিম নজরুল হকসহ আরো অনেকে। মেলার ভবিষ্যৎ সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনাসহ প্রথম জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে ২য় কনভেনশনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

কনভেনশনের মাত্র কয়েকদিন পর বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার অস্থায়ী কার্যালয়ের ঠিকানায় মেলার উপদেষ্টা ড. নীলিমা ইব্রাহিম সভাপতির নামে একটি পত্র লিখেন। সভাপতিকে প্রীতিভাজনেষু সম্বোধন করে ড. নীলিমা ইব্রাহিম বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার মধ্যে দূরাগত আলোক রশ্মি দেখতে পাচ্ছেন বলে পত্রে উল্লেখ করেন। তিনি সংগঠনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালনের জন্য প্রস্তাব করেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালনের ড. নীলিমা ইব্রাহিমের স্বহস্তে লেখা প্রস্তাবনা পত্রটি হচ্ছে- গত ১২.১১.৯৩ তারিখে আপনাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত শুধু হইনি, একটি দূরাগত আলোক রশ্মিও দেখতে পেয়েছি। আপনার প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। 

আমি আপনার মাধ্যমে সংগঠনের কাছে একটি প্রস্তাব রাখতে চাই। আজ ১৪. ১১ তারিখ পন্ডিত জওহুর লালের জন্মদিন, সমগ্র ভারতে এ দিনটি শিশু দিবস রূপে পালিত হয়। আমি আপনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটিও যেন বাংলাদেশে শিশু কিশোর দিবস হিসেবে পালিত হয়। ঘোষণা দেবে আপনার প্রতিষ্ঠান, দেখবেন একে একে অনেকেই গ্রহণ করবে, আর তাপ চাপ সৃষ্ঠি করতে পারলে সরকারও নতি স্বীকার করবে। শুভেচ্ছান্তে- নীলিমা ইব্রাহিম।

ড. নীলিমা ইব্রাহিমের এই প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা হয়। মেলার সকল কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার প্রথম জাতীয় সম্মেলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রস্তাবটি পাস করার পক্ষে মতামত দেন। একই সভায় প্রথম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয় ১৯৯৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর। সম্মেলনের আয়োজন করা হয় শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে। প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরে সারাদেশে গড়ে ওঠা ১১৬ টি শাখার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। 

এক পর্যায়ে ড. নীলিমা ইব্রাহিম প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে কয়েক হাজার প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিদের করতালির মধ্য দিয়ে জাতির জনকের জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ড. নীলিমা ইব্রাহিমের প্রস্তাবনায় জাতির পিতার জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস পালনের বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার উদ্যোগকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে স্বাগত জানিয়ে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এভাবে জাতির পিতার জন্মদিনে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

১৯৯৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাতির পিতার জন্মদিনে ‘জাতীয় শিশু দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহনের পর ১৯৯৪ সালে প্রথম জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা’র আয়োজনে। প্রথম জাতীয় শিশু দিবস এর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে। প্রথম জাতীয় শিশু দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

এ বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মদিনে ৩১তম জাতীয় শিশু দিবস পালিত হচ্ছে।

   


পাঠকের মন্তব্য