সরিষাবাড়ীতে হাট-বাজার ও কূলঘাট বাগিয়ে নিতে এমপির লোকদের মহড়া

ইউএনও অফিসের সামনে মহড়া ও অবস্থান

ইউএনও অফিসের সামনে মহড়া ও অবস্থান

জামালপুর সরিষাবাড়ীতে হাটবাজার ও কূলঘাট এমপির লোকজন ভাগবাটোয়ারার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিজেদের পছন্দনীয় লোকদের মধ্যে দরপত্র নিশ্চিত করতে সিডিউল বিক্রির দিনগুলোতে ইউএনও অফিসের সামনে মহড়া ও অবস্থান দেয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবদুর রশীদের সমর্থকরা।

এ ঘটনায় নির্ধারিত লোকজন ছাড়া ভয়ে সিডিউল কিনতে পারছেন না কেউ। এতে স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, আগামী ১৪৩১ বাংলা সনের জন্য উপজেলার ১০টি হাটবাজার ও ৩টি কূলঘাট ইজারা দিতে গত ৭ মার্চ দরপত্র আহ্বান করেন ইউএনও শারমিন আক্তার। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১ম দফায় ১১ মার্চ থেকে দরপত্রের সিডিউল বিক্রি শুরু হয়, যা আগামী ১৯ মার্চ পর্যন্ত বিক্রি, ২০ মার্চ জমা ও ২১ মার্চ দরপত্র বাক্স খোলা হবে। এরমধ্যে জেলার সর্ববৃহৎ গরুর হাট পিংনা ইউনিয়নের গোপালগঞ্জ হাট, যার সরকারি মূল্য সর্বনিম্ন এককোটি ১২ লাখ ২৫ হাজার ৬৯০ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইউএনও'র কার্যালয়ের সামনে অবস্থানসহ মহড়া দিচ্ছে স্থানীয় এমপির কর্মীসমর্থকরা। সবগুলো হাটবাজার নিজেদের মধ্যে নিশ্চিত করতে নির্ধারিত লোকজন ছাড়া সিডিউল কিনতে পারছেন না কেউ। বিশেষ করে গোপালগঞ্জ গরুর হাটটি বাগিয়ে নিতে পাহারা বসানো হয়েছে। অপরিচিত বা অন্যকেউ সিডিউল বিক্রির কক্ষে দেখলেই ঘেরাও করে বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে এমপির লোকজন।

মহড়ায় অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হারুন উর রশিদের নির্দেশে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান আমাদের এখানে থাকতে বলেছেন। পিংনা গরুর হাট সমঝোতা করা হবে, তাই এই হাটের সিডিউল বিক্রি বন্ধ। তবে অন্য হাটবাজার ও কূলঘাটের সিডিউল নির্ধারিত লোকদের কিনতে বাধা নাই বলে তিনি দাবি করেন।

ইতোপূর্বে গোপালগঞ্জ হাটের দায়িত্ব পালনকারী একজন ঠিকাদার জানান, লোকজন পাহারা দিচ্ছে, বাইরের কাউকে সিডিউল কিনতে দেয় না। তাই এবার তিনি সিডিউল কিনতে আগ্রহী হননি বলেও জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউএনও অফিস ছাড়াও ডিসি অফিসের স্থানীয় সরকার শাখা, উপজেলা ভূমি অফিস, থানা ও সোনালী ব্যাংক উপজেলা শাখা কমপ্লেক্স থেকেও সিডিউল ক্রয়বিক্রয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান, ব্যাংক, থানা, ভূমি অফিসের সবগুলো সিডিউল শুরুতেই কিনে নিয়েছে এমপির লোকজন। অন্যদের কেনার সুযোগ দিতে ওই অফিসগুলোতে নতুন করে সিডিউল পাঠানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এছাড়া ডিসি অফিসের স্থানীয় সরকার শাখায় গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা তার অনুমতি ছাড়া সিডিউল বিক্রি নিষেধ করে দিয়েছেন বলেও সূত্রটি জানায়।

এব্যাপারে সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ মুঠোফোনে বলেন, এরকম কোনো বিষয় আমার কাছে আসে নাই, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হারুন উর রশিদের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে কল করা হলেও রিসিভ করেননি।

হাটবাজার ভাগবাটোয়ারার বিষয়টি স্বীকার করে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, সবাই মিলে যদি হাটটা নেওয়া যায়, এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে মহড়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, লোকজন অবস্থান নিয়েছে, যদি সবাই মিলেই হাটটা নেওয়া যায় সেজন্য।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি অভিযোগ আকারে আমি পাইনি। তবে আমার অফিস ছাড়াও ডিসি অফিস, থানা, ব্যাংক, এসিল্যান্ড অফিসে সিডিউল পাওয়া যাচ্ছে।

বহিরাগত লোকজনের অবস্থানের বিষয়টি দেখার জন্য তিনি ওসিকে অবগত করবেন বলে তিনি জানান।

   


পাঠকের মন্তব্য