ফরিদপুর পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ 

ফরিদপুরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের নিলামে ক্রয়কৃত জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ

ফরিদপুরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের নিলামে ক্রয়কৃত জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ

ফরিদপুরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের নিলামে ক্রয়কৃত জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে নজরুল ইসলাম মৃধা নামে এক পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এছাড়া ওই জমি দখলে গেলে ওই কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ক্রেতাদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

জানা যায়, ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর ফরিদপুর ইর্স্টান ব্যাংকের নিলামকৃত দশ শতাংশ জমি ক্রয় করেন মোঃ মিঠুন খান ও মাহবুবুর রহমান নামে দুই ভাই। তারা জেলার সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের পান্নু খানের পুত্র। কিন্তু জমি ক্রয়ের পর থেকে দখলে যেতে পারছেন না তারা। নিলামের মাধ্যমে তাদের ক্রয়কৃত জমি নিজের জমি বলে দাবি করে বসেছেন ফরিদপুর পৌরসভার ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মৃধা। আর এতেই ভোগদখলে যেতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে তাদের। 

ইস্টার্ন ব্যাংকের ফরিদপুর শাখা সুত্রে জানা যায়, ব্যাংকে দশ শতাংশ জমি বন্ধক রেখে অর্থঋণ নেন জেলা সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ভাষানচর গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম মিরাজ। তফশীল অনুযায়ী ব্যাংকে বন্ধক রাখা জমিটি ১১৬নং কমলাপুর মৌজার আরএস খতিয়ান নং- ২০৮৬, এসএ খতিয়ান নং- ১৯৮০, ডিপি খতিয়ান নং- ১২৯৫, বিএস দাগ নং- ৮৬১৭ এবং এসএ প্লট নং- ৪৩২৮ ও বিএস প্লট নং ৮৬১৭। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার ঋণের পরিমাণ দাড়ায় এক কোটি একত্রিশ লাখ তেইশ হাজার তিনশত আটানব্বই টাকা বিরাশি পয়সা। পরবর্তীতে ঋণ পরিশোধ না করায় ফরিদপুর যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত এবং অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর আদালতের মাধ্যমে অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩ এর ৩৩(৫) ধারায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যা একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে নিলামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৫১ লাখ টাকা দিয়ে ওই দশ শতাংশ জমি ক্রয় করেন মিঠুন খান ও মাহবুবুর রহমান নামে দুই ভাই। ব্যাংক তাদের ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর জমিটি হস্তান্তর করেন।

কিন্তু নিলামে বিক্রয়কৃত জমিটি স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল মৃধার নামে রয়েছে বলে এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন। একই দাবি করে আসছেন ওই দুই ভাইয়ের কাছেও। এ বিষয়ে তিনি আদালতে আপিল করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তৎকালীন ওই ব্যাংকের নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট খান রেজাউল ইসলাম বাবুল। ব্যাংক কর্তৃপক্ষও বলছে, নিলামে বিক্রয়কৃত জায়গাটি নজরুল মৃধা নামে কারো নেই।   

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই জমিতে স্থাপনা তুলেছেন কাউন্সিলর নজরুল মৃধা। যার সামনের অংশে রানী রান্না ঘর নামে একটি খাবার হোটেল করা হয়েছে। গত ৬ মাস আগে ভাড়া নেন বলে জানিয়েছেন হোটেলের মালিক ফৌজিয়া রানী। এছাড়া ভেতরের অংশ টিনের ঘর তুলে ভাড়া দেয়া হয়েছে। গত ৩/৪ মাস আগে ভাড়া নেন মোতালেব নামে এক ব্যক্তি। তারা সকলেই স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল মৃধার নিকট থেকে ভাড়া নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। 

জানতে চাইলে ওই কাউন্সিলর নজরুল মৃধা বলেন, 'ওই দাগে আমার ৩.৩৭ শতাংশ ক্রয়কৃত জমি রয়েছে এবং দশ শতাংশ জমি (নিলামকৃত) আমি অ্যার্টনি পাওয়ার মূলে মালিক হয়েছি। আমার কোন জমি নিলাম হয়নি। এছাড়া আমি আশরাফুল ইসলাম মিরাজ নামে কাউকে চিনি না।' তাহলে ওই জমি ব্যাংক কেন নিলামে ডেকেছে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সেটা ব্যাংক জানে।

এদিকে আজ রোববার বেলা ১১ টায় প্রায় ৬০ জন শ্রমিক নিয়ে ওই জমিতে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করতে যান ক্রেতা মিঠুন খান ও মাহবুবুর রহমান। এ সময় কাউন্সিলর নজরুল মৃধার নেতৃত্বে তাদের উপর হামলা করা হয়। এতে চারজন শ্রমিকসহ তারা দুই ভাই আহত হয়ে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিঠুন খান বলেন, আমি ব্যাংকের মাধ্যমে জমিটি ক্রয় করেছি। এরপর থেকেই ওই জমি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল মৃধা। আমরা ওই জমিতে গেলে আমাদের প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। 

তিনি বলেন, আজ বাউন্ডারি ওয়াল নির্মান করার জন্য আমি পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে সেখানে যাই। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতেই নজরুল মৃধার নেতৃত্বে একদল যুবক আমাদের উপর হামলা করে। এ সময় আমার শ্রমিকদেরও বেধরক মারধর করা হয়। আমাকে ও আমার ছোট ভাইকেও বেধরক মারধর করে। 

মিঠুন খানের বাবা পান্নু খান বলেন, আইনীভাবে আমাদের সমস্ত কাগজপত্র রয়েছে। আমরা জায়গা কিনেছি ব্যাংকের মাধ্যমে কিন্তু উনি কে। জায়গা যার ছিল তারা বাঁধা দিচ্ছে না। অথচ নজরুল মৃধা এই জমির কেউ না হয়ে নিজের জমি দাবি করে বসে আছেন। উনি একজন ভূমিদস্যু, গডফাদার। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই এবং তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।  

হামলার বিষয়ে কোতয়ালী থানার ওসি মোঃ হাসানুজ্জামান বলেন, সকালে একটি ঝামেলার কথা শুনে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। পরবর্তী একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

   


পাঠকের মন্তব্য