কুড়িগ্রামে অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে দিশেহারা মানুষ 

কুড়িগ্রামে অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে দিশেহারা মানুষ 

কুড়িগ্রামে অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে দিশেহারা মানুষ 

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের অসময়ের ভাঙনে দিশেহারা এই নদের পাড়ের বাসিন্দাদের। ক্রমে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় রোধ করা যাচ্ছে না। শুষ্ক আর বসন্তের সময়ে পানির স্রোত অনেক কম তারপরও ভাঙন দেখে হতবাক স্থানীয়রা। গত এক মাসে ব্রহ্মপুত্রের ব্যাপক ভাঙনে উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দক্ষিণ নামাজের চর এলাকার বসতভিটা হারিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার। এখনও অনেক পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়নি। ভাঙনে সব হারিয়ে দিশাহারা এসব পরিবার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ২৫০টি বসতবাড়ী এবং ৮০০ বিঘা ফসলী জমি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, নামাজের চর মহাবিদ্যালয়, নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ (খেয়ার চর) বাজারসহ ফসলী জমি। ফলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে এই জনপদের মানুষজন। অব্যাহত ভাঙন ঠেকাতে ব্যক্তি ও সামাজিক উদ্যোগে গাছের ডাল ও বস্তা ফেলে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দারা।

তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবার পদক্ষেপে আপদকালীন সময়ে ভাঙন কবলিত এলাকায় এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজের পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মতি শিউলী, ব্রহ্মপুত্র  ভাঙন থেকে হাতিয়া ইউনিয়ন বাঁচাও কমটির সভাপতি বিএম আব্দুল ওহাব শাহসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

ভাঙন কবলিত এলাকার ববিতা খাতুন জানান, শুধুমাত্র  বসতভিটা ও জমাজমি ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে বাড়ীর সব কাজকর্ম ফেলে দিনরাত বস্তায় বালু ভর্তি করে আমরা নদীতে ফেলছি। এমনও দিন গেছে সারাদিন রোজা থেকে নদীর পাড়েই পানি মুখে দিয়ে ইফতার করেছি।

খেয়ার চর এলাকার হযরত আলী জানান, আমাদের বাপ-দাদার জনমে দেখি নাই এই অসময়ে এভাবে নদী ভাঙে। যেভাবে ভাঙছে তাতে করে শুকনো মৌসুমে ভাঙন ঠেকানো না গেলে খেয়ার চর বিলীন হয়ে যাবার শংকা আছে।

কৃষক আনছার আলী জানান, তার ৪৫ শতাংশ ভুট্টা খেত, ৯ শতাংশ কচু খেত নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও বেগুন, মরিচ, লাউ, লাল শাকসহ বিভিন্ন সবজি খেত ভাঙনে কবলে। কিভাবে স্ত্রী-সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিবে সেই চিন্তায় এখন দিন কাটছে।

সাহেবের আলগা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি বারি মোল্লা জানান, ব্রহ্মপুত্র ভাঙন রোধে আমরা এলাকাবাসী নিজ অর্থায়নে সেচ্ছাশ্রমে ১৪ হাজার বালু ভর্তি বস্তা নদীতে ফেলেছি। তবুও কোন ভাবেই ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, এমপি মহোদয়ের উদ্যো‌গে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখা‌নে এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং এর কাজ চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত স্থায়ী ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে। 

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভাঙন রোধে স্থানীয় লোকের সহযোগিতায় আমাদের এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে আরো ফেলানো হবে। চলতি সপ্তাহে টেন্ডারের ৮০০মিটার কাজ শুরু হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এমপি সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা বলেন,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙন রোধে সাড়ে ৬ কোটি টাকা বাজেট দিয়েছেন।যা টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে টেন্ডারে কাজ শুরু হবে।

   


পাঠকের মন্তব্য