মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ফোটো)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ফোটো)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের সম্ভাব্য প্রভাব, মুদ্রাস্ফীতি প্রশমিত করার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা এবং দেশের অভিবাসন নীতি সহ বিভিন্ন জটিল বিষয়ে ভাষণ দিয়েছেন। উপরন্তু, যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ানের সাথে আলোচনায় অবৈধ অভিবাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সহযোগিতা সহ দ্বিপাক্ষিক উদ্বেগগুলি তুলে ধরেন। 

শেখ হাসিনা মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত এবং বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্ববাজারে অস্থিতিশীলতা এবং জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সম্ভাবনা তুলে ধরেন। তদুপরি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধার কারণে রপ্তানির জন্য পরিবহন খরচ বেশি হতে পারে, যা বাংলাদেশী রপ্তানিকারকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সরকারের সতর্কতার ওপর জোর দেন এবং সংঘাতের মাত্রা ও সময়কাল ঘিরে অনিশ্চয়তা স্বীকার করে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা জনগণকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রচেষ্টার আশ্বাস দিয়েছেন। বৈশ্বিক বাজারের চাপ সত্ত্বেও, সরকার মূল্য স্থিতিশীল করতে এবং প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি এবং বিদ্যমান সম্পদকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার মতো ব্যবস্থার মাধ্যমে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন, বিশেষ করে দুর্বল সম্প্রদায়ের জন্য।

শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী অ্যান-মারি ট্রেভেলিয়ানের সঙ্গে আলোচনায় অবৈধ অভিবাসনের প্রতি বাংলাদেশের জিরো-টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করেন। যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তা অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আইনি অভিবাসন চ্যানেলের ওপর জোর দিয়েছেন। অবৈধ অভিবাসন মোকাবেলায় দুই দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। উপরন্তু, আলোচনায় বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই), বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা সহ পারস্পরিক স্বার্থের ক্ষেত্রগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বিশেষ করে ভাসানচর দ্বীপে প্রয়োজনীয় সেবা ও অবকাঠামো প্রদানে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কামনা করেন। অধিকন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং জলবায়ু চুক্তি ও উদ্যোগে যুক্তরাজ্যের সাথে অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেয়।

শেখ হাসিনা ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সহ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির রূপরেখা তুলে ধরেন। সরকারের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করা এবং একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং স্মার্ট কল্পনা করা। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ। এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাজ্যের মতো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ এবং যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ানের সাথে আলোচনা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, অভিবাসন সমস্যা এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের কারণে উদ্ভূত অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও, সরকার দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করে দেশের অর্থনীতি এবং নাগরিকদের কল্যাণ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

   


পাঠকের মন্তব্য