উপজেলা নির্বাচন; বিভক্ত আওয়ামী লীগ নেতারা, দ্বন্দ্বের শঙ্কা

ঠাকুরগাঁওয়ে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

ঠাকুরগাঁওয়ে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপের শেষ মুহূর্তে প্রচার প্রচারণা চলছে। সদর উপজেলা পরিষদে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগের পাশাপাশি ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এলাকার উন্নয়নসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। তবে ভোটের মাঠে বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ভোটের মাঠে প্রচার ও সভা—সমাবেশে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তপ্ত করছেন নির্বাচনী মাঠ। এতে দ্বিধাদ্বনে্দ্ব ভুগছেন দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। তবে দ্বন্দের আশঙ্কাও বাড়ছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একই দলের চার প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাড. অরুনাংশু দত্ত টিটো (আনারস) প্রতীকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোশারুল ইসলাম সরকার (মোটরসাইকেল) প্রতীকে, আওয়ামী লীগের সহ— সভাপতি রওশনুল হক তুষার (ঘোড়া) প্রতীকে ও সাবেক ছাত্রনেতা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. কামরুল হাসান খোকন কাপ—পিরিচ প্রতীকে লড়ছেন।

চারজনের মধ্যে ভোটের মাঠে এগিয়ে রয়েছেন অরুনাংশু দত্ত টিটো ও মোশারুল ইসলাম। এ দুই প্রার্থী মাঠে গণসংযোগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা রীতিমত প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। নিজ দলের দুই প্রার্থীকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে  পড়ে গেছেন। আবার অনেকেই নির্বাচনে কোন প্রার্থী বিজয়ী হবেন তা নিয়ে পড়েছেন দোটানায়। কারণ এ মুহূর্তে সিদ্ধান্তে ভুল করলে পরে রাজনীতিতে মাশুল দিতে হবে। আবার এ দুই প্রার্থীকে ঘিরে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ও সমর্থক আপাতত নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।

ঘোড়া প্রতীকের রওশনুল হক তুষার ও কাপ—পিরিচ প্রতীকের কামরুল হাসান খোকনের প্রচার—প্রচারণা সেভাবে পরিলক্ষিত না হলেও আনারস ও মোটরসাইকেলের পক্ষে সরাসরি মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে প্রচার ও সভা—সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী ভুট্টো, সাংগঠনিক সম্পাদক সন্তোষ কুমার আগরওয়ালা ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যরা।

আর আনারস প্রতীকে জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর, জেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সুনামসহ সহযোগী সংগঠনের একাংশ ভোটের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আর ঠাকুরগাঁও—১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের একটিই বার্তা আগামী ২১ তারিখের নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীকের মোশারুল ইসলামকে চেয়ারম্যান হিসেবে চাই বলে এক নির্বাচনী সভায় ভোটারদের উদ্দেশে মন্তব্য করেছেন রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক গণেশ চন্দ্র সেন।

অপরদিকে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) সদর উপজেলা যুব লীগের সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ (টিবওয়েল), সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা (উড়োাজাহাজ), রুহিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও (মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান) জেলা মহিলা লীগের বন—পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক (ফুটবল) ও যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাসহুরা বেগম হুরা কলস প্রতীকে লড়ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে চারজনের মধ্যে দুজনই হ্যাভিওয়েট প্রার্থী। স্বাভাবিকভাবে একজনের পক্ষে গেলে আরেকজন ক্ষুব্ধ হবেন। এমন অবস্থায় আমরা দ্বিধাদ্বনে্দ্ব আছি। দুজনই তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োাগ করছে।

আর যুবলীগের কয়েকজন বলেন, আমরা থানা ও ইউনিয়নের রাজনীতি করি। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার শীর্ষ নেতারা প্রার্থী হওয়ায় তাদের পক্ষে বা বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নিলে ভবিষ্যতে পদ না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের মাঝে বিভেদ তৈরি হচ্ছে; যা সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানেও শঙ্কা রয়েছে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ও দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রয়য় অনুযায়ী নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না, তাই তারা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। এতে কোনো বিভেদ দেখছি না। প্রার্থীদের দলীয় পদ পদবি ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করারও কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে নেতাকর্মীদের দলীয় শৃঙ্খলা, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে অনুরোধ করেন তিনি।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সোলেমান আলী জানান, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে সদর উপজেলায় ব্যালট পেপারের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। যদি কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী নির্বাচনের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা প্রতিহত করতে প্রস্তুত রয়ছে বলে জানান তিনি।

জেলা নির্বাচন অফিসের দেয়া তথ্য মতে, দ্বিতীয় ধাপে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান মিলে মোট ৯ প্রার্থী প্রতিদ্বনি্দ্বতা করছেন। পৌরসভা ও ২২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯০৩, নারী ২ লাখ ৪২ হাজার ২৬৮ ও তৃতীয় লিঙ্গের ৪ জন। ১৮৫টা ভোট কেন্দ্র ও ১৪৫৩টি বুথ রয়েছে।

   


পাঠকের মন্তব্য