যুক্তরাজ্যে অবাঞ্ছিত হতে পারেন তারেক রহমান !

ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি এবং এর প্রভাব

ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি এবং এর প্রভাব

সম্প্রতি, যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশ একটি 'ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন' চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যার লক্ষ্য অবৈধ অভিবাসী এবং নির্দিষ্ট কিছু অপরাধীকে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে। এই চুক্তিটি অবৈধ অভিবাসন মোকাবেলা এবং যুক্তরাজ্যের সাথে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, বিশেষ করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যাবর্তন এবং সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর করা।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র, দ্য টেলিগ্রাফ এবং দ্য স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ১১,০০০ বাংলাদেশি নাগরিক ভ্রমণ এবং কাজ সহ বিভিন্ন অজুহাতে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এসব আবেদনের মাত্র ৫ শতাংশ অনুমোদন করেছে। ফলস্বরূপ, প্রায় ১০,০০০ বাংলাদেশি আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, এবং এই ব্যক্তিদের এখন 'ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন' চুক্তির শর্তে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। 

যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে 'ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন' চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে- 

  1. যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত প্রত্যাবাসন করা হবে।
  2. চুক্তিটি কেবল অবৈধ অভিবাসীদেরই নয় বরং দোষী সাব্যস্ত অপরাধী এবং যারা বাংলাদেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়ায় তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করে।
  3. অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের মর্যাদা প্রত্যাহারে যুক্তরাজ্য সহায়তা করবে।

তারিক রহমানের মামলা

এই চুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য দিক বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং দণ্ডিত তারেক রহমানকে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টার সাথে সম্পর্কিত। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকার দায়ে তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থ পাচারের দায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বাংলাদেশের হাইকোর্ট। এসব দোষী সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার তারেক রহমানের প্রত্যাবাসনকে তার রাজনৈতিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে দেখে। সরকারের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় সহিংসতা উস্কে দেওয়া এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনাসহ লন্ডন থেকে বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন রহমান। কূটনৈতিক সূত্রগুলি ইঙ্গিত দেয় যে ফাস্ট ট্র্যাক চুক্তিটি আংশিকভাবে তার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের সুবিধার ইচ্ছা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।

কূটনৈতিক এবং আইনি বিবেচনা

তারেক রহমানের প্রত্যাবাসন একটি স্পর্শকাতর ও জটিল বিষয়। চুক্তি সত্ত্বেও, উল্লেখযোগ্য আইনি বাধা অতিক্রম করতে হবে। রহমানের অ্যাসাইলাম স্ট্যাটাস এই দাবির উপর ভিত্তি করে যে তিনি বাংলাদেশে ফিরে গেলে তার জীবন বিপদে পড়বে। এই দাবিটি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জটিলতার একটি স্তর যুক্ত করে, কারণ ইউকে অবশ্যই আশ্রয় প্রত্যাহার এবং নির্বাসনের সাথে এগিয়ে যাওয়ার আগে মানবাধিকারের প্রভাবগুলি সাবধানতার সাথে বিবেচনা করতে হবে।

যদিও চুক্তিটি দ্রুত রিটার্নের জন্য একটি কাঠামো নির্ধারণ করে, প্রকৃত বাস্তবায়ন, বিশেষ করে রহমানের ক্ষেত্রে, বিলম্ব এবং আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ সরকার রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্য তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে 'ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন' চুক্তি অভিবাসন এবং ফৌজদারি বিচার ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ চিহ্নিত করে। যদিও এটি অবৈধ অভিবাসী এবং অপরাধীদের জন্য নির্বাসন প্রক্রিয়াকে প্রবাহিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়, তারেক রহমানের হাই-প্রোফাইল মামলা এই ধরনের চুক্তিতে জড়িত জটিলতার উপর জোর দেয়। বাংলাদেশ যখন এই চ্যালেঞ্জগুলোকে নেভিগেট করছে, তখন তার বৃহত্তর রাজনৈতিক ও আইনগত উদ্দেশ্য অর্জনে চুক্তির কার্যকারিতা দেখতে হবে।

এই প্রতিবেদনটির লক্ষ্য ইউকে-বাংলাদেশের 'ফাস্ট ট্র্যাক রিটার্ন' চুক্তি এবং এর প্রভাব, বিশেষ করে তারেক রহমানকে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক অগ্রগতিগুলির একটি ব্যাপক ওভারভিউ প্রদান করা। এই চুক্তির সম্পূর্ণ প্রভাব মূল্যায়ন করার জন্য পরিস্থিতির আরও পর্যবেক্ষণ এবং কূটনৈতিক আলোচনার প্রয়োজন হবে।

   


পাঠকের মন্তব্য