পটুয়াখালীতে টাকার বিনিময়ে স্ত্রীকে পতিতালয়ে বিক্রি !

 স্বামী জাহিদ সরদার

স্বামী জাহিদ সরদার

বিয়ের ২বছর পর স্ত্রীকে টাকার বিনিময়ে পটুয়াখালী পতিতালয়ে বিক্রি করে প্রবাসে পালিয়ে যাওয়া ও মানবপাচারের অপরাধে স্ত্রী শাহিনুর বেগমের অভিযোগে স্বামী জাহিদ সরদারের বিরুদ্ধে ডাক ফেরৎ যোগ্য লিগ্যাল নোটিশ করা হয়েছে। লোভী পাষন্ড ও মানবপাচারকারী জাহিদ চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড ভেদুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা জালাল সরদারের ছেলে।

গত বুধবার (৭- ডিসেম্বর২০২২ ইং) তারিখ অ্যাডভোকেট শহিদুল আলম জজ কোর্ট পটুয়াখালীর মাধ্যেমে মোসাঃ সাহিনুর বেগম বাদী হয়ে লিগ্যাল নোটিশ করেন। লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে স্বামী মোঃ জাহিদ সরদার ও চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন সুজনকে ১৫ দিনের মধ্যে শাহিনুর বেগমেকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে লিগ্যাল নোটিশের জবাব প্রদান করতে বলা হয়েছে। 

অভিযুক্ত, ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন সুজন চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের ভেদুরিয়া গ্রামের হাজী আঃ রাজ্জাক মালের ছেলে। 

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৪ বছর আগে বরিশাল সদর উপজেলা ১০ নং চন্দ্রমোহন ইউনিয়নে ভেদুরিয়া গ্রামের জালাল সরদারের ছেলে জাহিদের সঙ্গে তাদের বাড়িতে বসে মেহেন্দীগন্জ উপজেলার চরকাকটা গ্রমের মৃত্যু আলতাফ সরদারের মেয়ে মোসাঃ সাহিনুর বেগমের শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ে পড়ান একই এলাকার মাওলানা মোশাররফ আঁকন।

বিয়ের পরে স্বামী জাহিদ বিদেশে যাওয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে স্ত্রী শাহিনুরের পরিবারের কাছে গরীব পরিবারে জম্ম নেওয়ায় যৌতুকের টাকা না দিতে পারায় শারীরিকভাবে অমানুষিক নির্যাতন চালায় জাহিদ। পরে স্ত্রীকে চিকিৎসার কথা বলে বাড়ি থেকে পটুয়াখালী এনে পতিতালয়ের দালালের কাছে ২০ বছরের কন্টেকে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিদেশ পারি দেয় পাষন্ড স্বামী জাহিদ। কয়েক বছর পরে জাহিদ দেশে ফিরলেও স্ত্রী থাকেন পটুয়াখালী পতিতালয়। 

এভাবে তাদের ১৪ বছর কেটে যায়। জাহিদ দেশে ফিরে এসেছে বিষয়টি টের পেয়ে গত ৫ ডিসেম্বর শাহিনুর তার এক আত্মীয়কে নিয়ে জাহিদের বাড়ি উদ্দেশ্য বরিশাল সদর উপজেলা ১০নং চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদে গেলে পরিষদের ব্রীজের পাশে জাহিদের দোকান থাকায় জাহিদ শাহিনুরের চোখে চোখ পরে। পরিষদের পথেই জাহিদের বাড়ি। শাহিনুর পরিষদের দিকে হাটতে থাকে জাহিদ স্থানীয় ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন সুজনকে কল করে বিষয়টি জানালে ইউপি সদস্য স্থানীয় আয়ুবআলী হাওলাদারের ছেলে লিটন, মুজাম্মেল হাওলাদারের ছেলে সজিব সহ বকাটে রনিকে লেলিয়ে দিয়ে শাহিনুর ও তার আত্মীয়কে প্রথমে জাহিদের দোকানে ভিতর ডেকে এনে যৌথভাবে অতর্কিত হামলা চালায় মারধর করে। পরে ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন এর সহযোগীতায় ইউনিয়ন পরিষদের রুমে নিয়ে রেখে নির্যাতন চালায় জাহিদ বাহিনী।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শাহিনুর বলেন, পরপর আমরা দু‘বার হালমার শিকার হয়েছি এমনকি আমাদের সাথে থাকা টাকা পয়সা ও স্বর্ণ অলংকার নিয়ে যায় হামলাকারীরা। 

ভুক্তভোগী শাহিনুর আরও বলেন, আমরা হামলার শিকার হয়ে নির্যাতিত হয়েছি বিষয়টি স্থানীর চেয়ারম্যান সিরাজুল হক, বন্দর থানা পুলিশ ও সাংবাদিক সবাই জানেন। চেয়ারম্যান ঘটনা জানতে পেরে পুলিশের কাছে জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে তাদের সঙ্গে ঘটনা খুলে বলি, জাহিদ আমাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমাকে অজ্ঞান করে পটুয়াখালী পতিতালয় বিক্রি করেন। আমি জাহিদের বাড়িতে ছিলাম তাদের ঘরের আসবাপত্র থেকে শুরু করে ভাই বোন আত্মীয় স্বজন সবাইর নাম সহ জাহিদের কোন জায়গায় তিলা আছে তাও বলে দিয়েছি। কিন্তু তার পরেও আমার কোন কথা বিশ্বাস করেনি তারা। আমি জাহিদ ও ইউপি সদস্য সহ হামলাকারীদের বিচার ও জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়া টাকা ও স্বর্নলংকার ফেরত চাই।

সেখান থেকে একজনের জিম্মায় মুক্ত হয়ে যখন আমি বুঝতে পেরেছি বরিশালে কোন বিচার পাবনা এমনকি বরিশালে আমার আপন কেউ নেই তাই পটুয়াখালী জজ কোর্টের আ্যাডভোকেটের মাধ্যেমে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি এখনও দেখি তারা কি করবে! যদি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় ভালো, তা না হলে আমি হামলাকারীদের কাউকে মামলা থেকে বাদ দিব না এমনকি বাদ যাবে না। প্রধান সহযোগী আসামি হিসেবে ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন সুজন থাকবে।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে, ঘটনার সত্যতা মিলেছে নাম না প্রকাশে অনেকেই বলেন, জাহিদ বিয়ে করেছে ইউনিয়নের সবাই জানে। জাহিদ বৌকে মেরে পুকুর পারে রেখে দিত। বৌয়ের নির্যাতনের ঘটনা সবাই জানে। তারা আরও বলেন, শাহিনুরকে বাড়ি থেকে চিকিৎসার কথা বলে নিয়ে গিয়ে জাহিদ বাড়িতে এসে সবাইকে জানায় শাহিনুর অন্য পুরুষের সাথে চলে গেছে তাই আমরা এতোদিন জানি।

আ্যাডভোকেট মোঃ শহিদুল আলম বলেন, আমি প্রথমে ১৫ দিনের মধ্যে শাহিনুরকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য জাহিদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ করেছি, তারা যদি মানতে না চায় ভালো না হয় পরবর্তীতে আমরা কোর্টে মামলা করব।

এবিষয়ে পাষন্ড ও মানবপাচারকারী অভিযুক্ত জাহিদের কাছে জানতে তার নিজ এলাকা চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের ভেদুরিয়া গ্রামে গেলে প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে গা ডাকা দেয়ায় তার কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে অভিযুক্ত মেম্বার জয়নাল আবেদীন ও ওয়ার্ড সভাপতি জাকির হোসেন এর মাধ্যমে নিউজ না করার প্রস্তাব দেয়।স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান বিষয়টি আমলে নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

   


পাঠকের মন্তব্য