কক্সবাজার জেলা আ'লীগের সম্মেলন আগামী ১৩ ডিসেম্বর 

কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন

কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন

টানা ৬ বছর ১০ মাসের বেশি সময়ের পর ১৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার সফরের ৫ দিন পর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলন সফল করতে সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে আওয়ামীলীগ।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময়ের পর আয়োজিত এ সম্মেলনকে গিরে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আগে থেকে দৃশ্যমান থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর ৭ ডিসেম্বরের কক্সবাজার সফর ও সফল জনসভার পর বদলে যাচ্ছে নেতৃত্বের সমীকরণ।

গতকাল শনিবার  কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠণের জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, পূর্ব নির্ধারিত ১৩ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলের আয়োজনের সকল প্রস্তুতি শেষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ ডিসেম্বরের জনসভাস্থল শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সকাল ১০ টায় এ সম্মেলন শুরু হবে। এর উদ্বোধক হিসেবে থাকবেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। প্রধান অতিথি থাকবেন, সাধারণ সম্পাদক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অতিথি হিসেবে কেন্দ্রিয় নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সিরাজুল মোস্তফা, আমিনুল ইসলাম আমিন, ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সহ অন্যান্যরা উপস্থিত থাকবেন।

তিনি জানান, এবারের সম্মেলনে মোট ৩৫১ জন কাউন্সিলর থাকবে। বর্তমান জেলা আওয়ামীলীহ নতুন নেতৃত্বে বিশ্বাসী। তিনি ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সফল জনসভার জন্য গণমাধ্যমের কাছে কতৃজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ পরিবর্তনে বিশ্বাসী। এখানে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

দলীয় নেতা-কর্মীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ ডিসেম্বর বুধবার শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর প্রধানমন্ত্রী জনসভাকে অত্যন্ত সফল এবং স্মরণকালে সর্ববৃহৎ হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামীলীগ নেতারা। এর জন্য উৎফুল্ল আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা। এ সফল জনসভার কারণে ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জেলা সম্মেলনের সমীকরণে বদলে দিয়েছে।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান জানিয়েছেন, এটি কেবল মাত্র আওয়ামীলীগের জনসভা ছিল না। ছিল কক্সবাজারবাসির জনসভা। কক্সবাজারের সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন যজ্ঞে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ছিল আরও উন্নয়নের কথা। কক্সবাজারের উন্নয়ন এখন আন্তর্জাতিক একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এসব উন্নয়ন বাংলাদেশ হচ্ছে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাণিজিক নগর। এখানে সব চেয়ে বেশি উন্নয়ন হচ্ছে মহেশখালী উপজেলায়। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন মহেশখালী-কুতুবদিয়ার আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের সাথে। হয়তো দ্বীপ কেন্দ্রিক উন্নয়নের কোন খবরা খবর বা বার্তা দিয়েছেন।

তিনি জানান, পুরো জনসভায় জন সমাবেশ ছিল লক্ষ্যণীয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে জেলা আওয়ামীলীগ উৎফুল্ল। কেননা সভার আয়োজন তো জেলার ব্যানারে। এ সভায় ১৩ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর মধ্যে যেমন তৎপরতা দেখা গেছে, তেমন তৎপরতা দেখা গেছে সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও। তারা মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নানা চেষ্টা ও মানুষ এসেছেন। এখন ১৩ ডিসেম্বরের সম্মেলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কি বার্তা তা জানতে হয়তো আরও অপেক্ষা করতে হবে।

কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম জানান, কক্সবাজার জেলা ভৌগলিকভাবে যে অবস্থায় আছে এতে যে জন সমাবেশ হয়েছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে গেছে। এটা বর্তমান কমিটির জন্য পজেটিভ হয়ে উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে ১৩ ডিসেম্বর সম্মেলনে এর প্রভাব থাকবে।

ইতিমধ্যে নানাভাবে ও প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘীরে আওয়ামীলীগের পদ প্রত্যাশীরা নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন।

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী নিজকে ভারমুক্ত সভাপতি হওয়ার চেষ্টায় আছেন। সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানও সভাপতি হতে আগ্রহী, তবে তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রেখে দিলেও নারাজ নন। সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ, চকরিয়া পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমও সভাপতি প্রার্থী হতে চান। সাধারণ  সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে বর্তমান যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রণজিত দাশ জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য জেলার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আশেক উল্লাহ রফিক, প্রচার সম্পাদক খোরশেদ আলম, সাংগঠণিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, সদস্য রাশেদুল ইসলামের নামও শুনা যাচ্ছে।

জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ১৩ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে অনেকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। এখানে প্রধানমন্ত্রী যে নিদের্শনা দেবেন তাই মেনে নেবেন।

জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রণজিত দাশ জানান, জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে ২ বছর ধরে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী আগমনে এই তৎপরতা ছিল বেশি। এখন প্রধানমন্ত্রী যেভাবে জেলা আওয়ামীলীগ সাজাবেন ওইটাই চ‚ড়ান্ত হবেন।

রাশেদুল ইসলাম জানান, বর্তমান কমিটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে তথ্য আছেন এতে কিছুটা পরিবর্তনের আবাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার ঘুরে গেলেন। ১৩ ডিসেম্বর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা দেবেন বলে ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সকলেই মেনে নেবেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার  সাড়ে আট মাস পর  ১৩ অক্টোবর  ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি অনুমোদন দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে মনোনীত সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রায় ৫ বছর দায়িত্ব পালনের পর দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে ওই কমিটিতে আসে নাটকীয় পরিবর্তন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা কমিটির সভাপতি  সিরাজুল মোস্তফাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করেন। 

সিরাজুল মোস্তফার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় অনুমোদিত জেলা কমিটিতে সহ-সভাপতির তালিকায় থাকা ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীকে।

   


পাঠকের মন্তব্য