আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন 

নতুন নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে হবে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ 

আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন (প্রতীকী ছবি)

আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন (প্রতীকী ছবি)

আর মাত্র একদিন পরই নতুন নেতৃত্ব পাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শনিবার দলটির ২২তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অন্যান্য বারের সম্মেলনের চেয়ে এবারেরটা ভিন্ন, ব্যতিক্রম। এই সম্মেলনের এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।  সম্মেলনের মাধ্যমে আসা নতুন নেতৃত্বকেই নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিতে হবে। তাই বড় এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন দায়িত্ব নিতে হবে নতুন নেতৃত্বকে। দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে বিরোধী শক্তির চাপ সামলে দায়িত্ব পালন করতে হবে নেতাদের। অনেকে বলছেন এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে অনেকটা নির্বাচনী নেতৃত্ব আসছে সম্মেলনের মাধ্যমে। এ কারণে নেতৃত্বে বড় কোনো পরিবর্তন না আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নেতৃত্বের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর।

কারণ দলের নেতা এবং কাউন্সিলররা নতুন  নেতৃত্ব নির্বাচনের ভার বরাবরই দলীয় সভানেত্রীর ওপর ছেড়ে দেন। কাউন্সিলের বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেন, সম্মেলনে দলীয় সভানেত্রী থেকেই নতুন কমিটি ঘোষণা আসবে। যোগ্যতার প্রমাণ দেখানোয় এবারও কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের আসতে পারেন। তিনি আরও বলেন, নতুন কমিটির দায়িত্বই হবে সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে আওয়ামী লীগকে জয়ী করার জন্য দলের সাংগঠনিক শক্তি গড়ে তোলা। আওয়ামী লীগের এই নতুন কমিটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও আন্দোলনের নামে নাশকতা প্রতিহত করতে সক্ষম হবে এই কমিটি। প্রায় একই মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দীন নাছিম। 

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ে শক্তিশালী সংগঠন বাংলাদেশে আর নেই। জাতির প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ যা করেছে তা অন্য কোনো দল করেনি। তিনি বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসছে। এক্ষেত্রে আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা দল ও সরকারকে একাকার করতে চান না। উনিই প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এবারের সম্মেলনেও এর প্রতিফলন থাকতে পারে। এটা হলো একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে ওই প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের আসল ট্রাম্পকার্ড। স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে যিনি বদ্ধ পরিকর।  নির্বাচনকে দলটির নতুন নেতৃত্বের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন আফম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ নিয়েইতো আওয়ামী লীগ সবসময় এগিয়ে যায়। আর সফল হয়। সম্মেলনের আগে কোনো পদে কেউ আনুষ্ঠানিক প্রার্থিতা ঘোষণা দেননি, প্রচারেও নামেননি কেউ। 

অথচ ভেতরে ভেতরে কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করেছেন নেতারা।  দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন শুধু একটি রাজনৈতিক দলের সম্মেলন নয়, এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে স্বপ্নও দেখায় আওয়ামী লীগ। এবারও সেই স্বপ্নের কথা থাকবে ঘোষণাপত্রে। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে আওয়ামী লীগের করণীয় এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখার অঙ্গীকার থাকবে ঘোষণাপত্রে। সেভাবেই কাজ চলছে। দলটির শীর্ষ পদে বা সভাপতি হিসেবে ৪১ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। দলের শীর্ষ পদে অন্য কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নজির নেই। এখন পর্যন্ত সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন। শেখ হাসিনা এবারও সভাপতি পদে থাকছেন- এটা নিশ্চিত। ফলে দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়েই মূল আলোচনা। টানা দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন ওবায়দুল কাদের। সাধারণ সম্পাদক পদে এবার আগ্রহীর তালিকায় অনেকেই রয়েছেন।

 আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২০১৬ সালের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে এই পদে দায়িত্ব পান। এখন তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আবার এই পদে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী, এমন ধারণা দলের ভেতরে রয়েছে। দলটির গঠনতন্ত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হওয়ার কোনো বিধান নেই। ফলে কেউ নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেননি। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক কে-এ ব্যাপারে অতীতে তাদের দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মেলনের কিছুদিন আগে ইঙ্গিত দিতে দেখা গেছে। কিন্তু আগ্রহীরা অনেক আগে থেকেই তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা দেখানোর চেষ্টা করতেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। যদিও এবার এখনও দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো ইঙ্গিত আসেনি। এখন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলকে নিয়ন্ত্রণ বা ঐক্যবদ্ধ রাখা-এই বিষয়টি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচনার অগ্রাধিকারে থাকবে বলে নেতাদের অনেকে বলছেন।

 তারা মনে করেন, বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা এবং আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে দলকে প্রতিনিধিত্ব করতে হয় দলের সাধারণ সম্পাদককে। ফলে এই বিষয়টিও সাধারণ সম্পাদক পদের ক্ষেত্রে বড় বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে কাউন্সিল আয়োজন সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বাই ৪৪ ফুটের মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূলমঞ্চে চার স্তরে আসন সাজানো হবে। প্রথমে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। 

দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিনিয়র নেতারা, বাকি দুটোতে কেন্দ্রীয় নেতারা। মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে। ২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১শে ডিসেম্বর। সর্বশেষ সম্মেলনের বাজেট ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এবারের সম্মেলনের জন্য বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি। এবার আলোকসজ্জা খুব একটা থাকছে না। আগের মতো বিশাল তোরণও হবে না। সাদামাটা কিছু তোরণ হতে পারে। 

সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের যে মঞ্চটিতে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে, সেখানেই আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। ২৪শে ডিসেম্বর সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভার কাজ শুরু হবে। সভাপতির ভাষণের মধ্য দিয়ে অধিবেশন শেষ হবে। পরে দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে নেতা নির্বাচন করা হবে। এ লক্ষ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্মেলনে অতিথি ও কাউন্সিলর মিলিয়ে লক্ষাধিক লোক উপস্থিতির আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে কাউন্সিলরের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার, ডেলিগেটের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি করা হবে। এদিকে কাউন্সিলে ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার বিদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না।  

   


পাঠকের মন্তব্য