পাইকগাছায় কুল চাষে সফল নার্সারীর মালিক সুকনাথ পাল

রজনীগন্ধা নার্সারীর মালিক সুকনাথ পাল

রজনীগন্ধা নার্সারীর মালিক সুকনাথ পাল

বাগানে সারি সারি কুলগাছ। আকারে ছোট। আবার মাঝারি। বড়জোর চার থেকে পাঁচ ফুট। কুলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছগুলো। বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। এক একটি গাছ ৫ থেকে ৬ হাত লম্বা। গাছের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত থোকায় থোকায় ঝুলছে শুধু বল সুন্দরী কুল। থাই আপেল কুলের ওপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং রয়েছে। ফলটি আকারে বড়, দেখতে ঠিক আপেলের মতো, খেতেও ঠিক আপেলের মতো সুস্বাদু। 

এদিকে এই ফলটি খেতে সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ পরিচিতি লাভ করায় ক্রেতাদের চাহিদাও দিন দিন বেড়েছে। বিধায় পাইকগাছায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু হয়েছে। আর কুল চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছে গদাইপুরের রজনীগন্ধা নার্সারীর মালিক সুকনাথ পাল। জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চল যখন লবণাক্ততার গ্রাস করছে। 

চাষীরা তখন দিশেহারা, ক্ষতিগ্রস্ত। সমদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হওয়ায় জোয়ার ভাটার প্রভাবে নিম্নাঞ্চল প্রায়শই ডুবে থাকে, সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি যখন বিপদগ্রস্ত। সে সাথে কৃষিও হুমকির সম্মুখীন। এমন অবস্থায় সুকনাথ পাল নিজের প্রতিভায় বিকশিত হয়ে রাড়ুলীর বাঁকায়  কুল চাষ করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। সাফল্যের কাহিনী জানতে মুখোমুখি হয়েছিলাম সুকনাথ বাবুর সাথে- তিনি দেড় বছর আগে উপজেলার বাঁকায় লীজ নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে প্রায় ৩ শতাধিক বল সুন্দরী, থাই আপেল ও কাশ্মীরি কুলের গাছের চারা লাগান। কুল গাছের চারা রোপনসহ তার দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়। চারা রোপণ করার ৭ মাসের মাথায় চারাগুলো পরিপক্কতা পেয়েছে। 

বাগানের বয়স প্রায় দেড় বছর। প্রথম কুল বাগান থেকে এক লাখ দশ হাজার টাকার কুল বিক্রি হয়। দ্বিতীয় বছরে গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। প্রতি গাছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি করে বল সুন্দরী, থাই আপেল কুল ধরেছে। ইতোমধ্যে বাগান থেকে কুল বিক্রি শুরু হয়েছে। শ্রমিকরা বাগানে কুল তোলা ও বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার মতো ফল বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান। শুরুতে প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় পাইকারী দরে বিক্রি করেছে। তবে শেষের দিকে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে কুল বিক্রি হবে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এই বাগান থেকে ৪ লাখ টাকার বেশী কুল বিক্রি করতে পারবে তিনি আশা প্রকাশ করছেন। 

সরেজমিনে কুল বাগানে গেলে দেখা যায়, সবুজ পাতার ফাঁকে লুকিয়ে রয়েছে বল সুন্দরী ও থাই আপেল কুল। যে দিকে দৃষ্টি যায় শুধু ফল আর ফল চোখে পড়ছে। বাহারী রঙের দৃষ্টি নন্দন কুল দেখলে মন কাড়ে। দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের আপেলের মতো। রঙ আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। 

খেতে অনেক সুস্বাধু ও মিষ্টি। বল সুন্দরী ফল চাষ করে ইতিমধ্যে তিনি এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন। দূর দূরান্ত থেকে অনেক বেকার লোকজন এসে দেখছেন এবং বিষয়ে নানা পরামর্শ তার কাছ থেকে নিচ্ছেন। কৃষি অফিসের তথ্যে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১০/১২টি কুলের বাগান, ক্ষেতের আইলে, বাড়ীতে, ছড়ানো ঠিটানো প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে কুল বাগান রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ উপজেলায় কিছু কিছু নার্সারীতে বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছেন। এরমধ্যে সুকনাথ পাল একজন সফল কৃষক। নতুন জাতের এই কুলের চাষ করে তিনি এলাকায় চমক কৃষ্টি করেছেন। 

তিনি আরও বলেন, বিদেশি জাতের এই কুল চাষ রৌদ্র উজ্জ্বল উচুঁ জমিতে ভালো হয়। যে বাগানে যত বেশি রোদের আলো লাগবে সেই জমির কুল বেশি মিষ্টি হবে। ৫-৬ হাত দূরত্ব গাছের চারা রোপণ করতে হয়। তুলানামূলক রোগ-বালাইও কম। নতুনভাবে কেউ যদি কাশ্মীরি আপেল কুলসহ বিভিন্ন জাতের কুল বাগান করতে আগ্রহ এবং পরামর্শ চাইলে তাকে অবশ্যই উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

   


পাঠকের মন্তব্য