ডারউইনের আগে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব মুসলিম বিজ্ঞানীর 

বিবর্তনবাদ তত্ত্ব

বিবর্তনবাদ তত্ত্ব

ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনকে বলা হয় বিবর্তনবাদ তত্ত্বের জনক। কিন্তু আপনি কি কখনো শুনেছেন, বিবর্তনের এই চিন্তাধারার কথা মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত ছিল বহু আগে থেকেই। না জেনে থাকলে সেই তথ্য দিচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি।

এই সংবাদ মাধ্যমটি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হচ্ছে, ডারউইনের আগে বিবর্তনবাদ তত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন একজন মুসলিম দার্শনিক। তার নাম আবু উসমান আমর বাহার আলকানানি আল-বাসরি। ইতিহাসে তিনি আল জাহিজ নামেই পরিচিত। ইরাকের মুসলিম দার্শনিক ছিলেন। আল জাহিজ তার আবিষ্কারের নাম দিয়েছিলেন ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আধুনিক বিজ্ঞানের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার তার মধ্যে অন্যতম হলো ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্ব। তার এই তত্ত্বে দেখানো হয়েছে প্রাণীরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক নিয়মে ধীরে ধীরে কীভাবে পরিবর্তিত হয়।

‘অন দ্য অরিজিন অব স্পেশিস’ নামে ডারউইনের বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে। এই বইয়ে তিনি বিবর্তনবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যাতে কোনো প্রাণী ক্রমাগত অভিযোজনের ফলে আপন পরিবেশের জন্যে বিশেষায়িত হতে হতে এক সময় নতুন একটি প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়।’

এই প্রক্রিয়াকে ইংরেজিতে বলা হয় ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচন। এই থিওরি বিজ্ঞানের জগতে বৈপ্লবিক তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত।

মুসলিম দার্শনিক আল-জাহিজের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব : আল-জাহিজের জন্ম হয়েছিল ৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে, দক্ষিণ ইরাকের বসরা শহরে। চার্লস ডারউইনের প্রায় এক হাজার বছর আগে একটি বই লিখেছিলেন ইরাকের এই দার্শনিক। বইটির নাম ‘কিতাব আল-হায়ওয়ান’। ইংলিশ নাম ‘দ্যা বুক অফ অ্যানিমেলস’। অর্থাৎ এটি ছিল প্রাণীদের প্রজনন সংক্রান্ত বিষয়ে একটি বই। আর এই বইয়ের কারণে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আল-জাহিজ।

আল-জাহিজের সময় আব্বাসীয় শাসনের চরম অবস্থা চলছিল। সেসময় জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেক বই গ্রিক ভাষা থেকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হতো। ধর্ম, বিজ্ঞান এবং দর্শন নিয়ে বেশ আলোচনা হতো তখন। আর এসবের কেন্দ্র ছিল বসরা শহর। এসব আলোচনা থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল আল-জাহিজের চিন্তাধারা।

সে সময় তিনি নানা বিষয়ে লেখালেখি করতে শুরু করেন। যেসব বিষয়ে তার খুব বেশি আগ্রহী ছিল সেগুলো হলো- বিজ্ঞান, ভূগোল, দর্শন, আরবি ব্যাকরণ এবং সাহিত্য। ধারনা করা হয়, তার জীবদ্দশাতেই তিনি দুইশর মতো বই প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ বই এই আধুনিক যুগেও টিকে রয়েছে।

আল-জাহিজ তার বই ‘কিতাব আল-হায়ওয়ান’ -এ সাড়ে তিনশ প্রাণীর পরিচয় তুলে ধরেছেন। বইটিতে তিনি এমন কিছু ধারনা তুলে ধরেছেন, যার সঙ্গে আধুনিক কালের বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদে তত্ত্বের সঙ্গে অনেক মিল পাওয়া যায়।

মুসলিম এই ​বিজ্ঞানী তার বইতে লিখেছেন, ‘টিকে থাকার জন্য প্রাণীদেরকে লড়াই করতে হয়। লড়াই করতে হয় তাদের খাদ্যের জন্য। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাই যাতে অপরের খাদ্য না হয়ে যায় সেটা নিশ্চিত করতে লড়াই করে। এমনকি, প্রজননের জন্যেও তাদেরকে সংগ্রাম করতে হয়।’ 

তিনি আরো লিখেন, ‘নিজেদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে গিয়ে পরিবেশের নানা কারণে প্রাণীরা নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এভাবেই তারা নতুন নতুন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়। আর যেসব প্রাণী প্রজনন ঘটাতে টিকে থাকতে পারে তারা তাদের সফল বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে পারে।’

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আল-জাহিজের এসব ধারনা তার পরবর্তী অন্যান্য মুসলিম চিন্তাবিদদেরকেও প্রভাবিত করেছে। তারা হলেন-আল-ফারাবি, আল-আরাবি, আল বিরুনী এবং ইবনে খালদুন।

এদিকে চার্লস ডারউইন মুসলিম বিজ্ঞানী আল-জাহিজের চিন্তাধারা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন কিনা বা তিনি আরবি বুঝতেন কিনা তার পক্ষে কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সূত্র: বিবিসি

   


পাঠকের মন্তব্য