আইনে সংশোধনী আনছে ইসি

সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা 

সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা 

সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা 

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা সহজতর করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী নির্বাচনে স্মার্ট অ্যাপের সহায়তায় ঘরে বসেই প্রার্থীরা অনলাইনে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। সেখানে সন্নিবেশিত থাকবে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার নানা তথ্য-উপাত্ত; এটির নামকরণ হতে পারে ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ। শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করার মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। এত দিন এটা শুধু আলোচনার পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল।

ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পদ্ধতি চালু করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (সংশোধনী আরপিও)-১৯৭২ সংশোধনী আনছে কমিশন। এর জন্য মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন নাও লাগতে পারে। কারণ সংশোধনীটি ছোট পরিসরের। তাই আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের সহায়তায় আইনটি কার্যকর করার চিন্তা করছে কমিশন।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ প্রসঙ্গে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের শুধু অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান চালু করতে কাজ করছি। আগামী ছয় মাস সময় লাগতে পারে এই ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করতে। কারণ বিশেষ অ্যাপ স্থাপন করার মাধ্যমে অনলাইন কার্যক্রম নির্বিঘ্নে ব্যবহারে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য সচেষ্ট আছি। এর জন্য দরপত্র আহ্বান করার উদ্যোগ নিচ্ছি। অ্যাপ তৈরির তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা এগিয়ে এলে আমাদের আর আর্থিক খরচ লাগবে না। তাদের কাছে সুযোগটি গ্রহণ করতে না পারলে দরপত্রে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, এর জন্য আইনে সংশোধনী আনা হবে। সেটি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভেটিং করে কার্যকর করা সম্ভব হবে।

নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র অনলাইনে জমা নেওয়ার বিষয়টি চালু করার উদ্যোগ নেয় ইসি। কারণ সশরীরে উপস্থিত হয়ে নির্বাচনী রিটানিং কর্মকর্তাদের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক প্রার্থী বাধার সম্মুখীন হন। এ ধরনের অভিযোগ বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে নানা সময়ে ইসি পেয়ে থাকে। কিন্তু সুুনির্দিষ্ট অভিযোগের অভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার সুযোগ রাখা হলে অপেক্ষাকৃত কম দুর্বল প্রার্থীরা ঘরে বসেই অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এর আগে এটি আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ্যাপটি ব্যবহার করে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিলের পাশাপাশি নির্বাচনসংক্রান্ত সব খুঁটিনাটি বিষয়, ভোটাররা ভোটকেন্দ্র, ভোটার নম্বর, কেন্দ্রের বুথসহ নির্বাচনে প্রার্থী কারা, নির্বাচনী এলাকার ম্যাপ, কোথায় কত ভোট পড়লো ও তার গ্রাফ, ফিগার; কোন প্রার্থী কোথায় এগিয়ে থাকল এসব তথ্য খুঁজতে ও দেখতে পারবেন।

অ্যাপ নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ডিজাইন কেমন হবে, কোথায় কি থাকবে এগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগেই অ্যাপটি তৈরি করতে চাই। তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কারণ এটা তৈরি করতে টেকনিক্যাল ও আর্থিক সাপোর্ট পাওয়ার বিষয় আছে। এটি পরিচালনা করতে অনেক টাকারও প্রয়োজন।

এর আগে বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেন, আগামী দিনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের শুধু অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান করতে চায় ইসি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। এখন স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সব কিছুর আবেদন অনলাইনে জমা দেওয়া হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা শোডাউন ও স্লোগান দিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় প্রথম দিনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন উল্লেখ করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অভিযোগ আছে, যারা মনোনয়ন জমা দিতে যান, তাদের কেউ কেউ বাধাগ্রস্ত হন। কোথাও কোথাও একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এই চিন্তা-ভাবনা কীভাবে বাস্তবায়ন করব এজন্য ইসির আইসিটি অনুবিভাগ একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। মনোনয়ন জমার ক্ষেত্রে যেন অসুবিধা না হয় সেটি বিবেচনা করা হচ্ছে। আহসান হাবিব বলেন, প্রথমে এটির পাইলট প্রকল্প নেওয়া হবে। চ্যালেঞ্জ কী ধরনের তা দেখা হবে। ছোট ছোট নির্বাচন পাইলট হিসেবে শুরু করা হবে। প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ, তারপর উপজেলা, সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তা ব্যবহার করা হবে। এগুলোতে সফল হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

তবে এরই মধ্যে কমিশন সব ধরনের যাচই-বাছাই সম্পন্ন করেছে। এখন দরপত্র আহ্বান করার মাধ্যমে অনলাইন পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছে। শিগগিরই এ প্রক্রিয়া আহ্বান করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।

   


পাঠকের মন্তব্য