১৯ জেলার ১৪৯টি ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল

১৯ জেলার ১৪৯টি ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল

১৯ জেলার ১৪৯টি ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রবিবার ভোরের মধ্যে এটি আঘাত হানতে পারে। এ ঘূর্ণিঝড় রূপ নিতে পারে সুপার সাইক্লোনে। বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে এখন সাগর উত্তাল। বর্তমানে এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অধিদফতর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে। একই সঙ্গে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। 

গত সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ম এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপ উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ম এলাকায় অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গভীর নিম্নচাপটি বুধবার (গতকাল) ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে বৃহস্পতিবার (আজ) পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। 

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোখার প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রবিবার ভোরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে পারে। আর এটি হতে পারে সুপার সাইক্লোন। 

সম্ভাব্য এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকার সবদিক থেকে প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় কমিটির সভার শুরুতে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ উপকূল থেকে গড়ে ১৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। শুক্রবার নাগাদ এটি উত্তরপূর্ব দিকে বাঁক নেবে এবং কক্সবাজার জেলা ও মিয়ানমার উপকূল দিয়ে অতিক্রম করবে। আঘাতের সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০-২২০ কিলোমিটার থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় এসওডি (স্থায়ী আদেশবলি) অনুযায়ী সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান মো. এনামুর রহমান। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় যত আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে তা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। সেগুলোয় ইতোমধ্যে ১৪ টন শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। 

আগামীকালের মধ্যে ২০০ টন চাল চলে যাবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি শেল্টার ম্যানেজমেন্টের জন্য। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ পরিবহন, জনবল ও লোকজন আনা-নেওয়ায় সহায়তা করে আসছে। লোকজনকে জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে পুলিশ সহায়তা করবে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নগরীর দামপাড়ার এ কন্ট্রোল রুমের (ফোন নম্বর- ০২৩-৩৩৩-৬৩০-৭৩৯) ফোনের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া যাবে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় জান-মালের ক্ষতি কমাতে চসিক ৯০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। গতকাল চসিকের দুর্যোগব্যবস্থাপনা উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো- ৪১টি ওয়ার্ডে ৯০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা, কন্ট্রোল রুম গঠন, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা ও ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবেগ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জরুরি যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা, নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করা, আরবান মেডিকেল টিম, আরবান ভলান্টিয়ার ও উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা, ঘূর্ণিঝড়ে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় যানবাহন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সড়কবাতি নির্বিঘ্ন রাখার প্রস্তুতি নেওয়া। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মিডিয়া সেল সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন উপকূলীয় এলাকায় ১৯ জেলার ১৪৯টি ফায়ার স্টেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে সবাইকে সতর্ক ডিউটিতে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া উপকূলবর্তী দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতি ফায়ার স্টেশনে আটজনের সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম, পাঁচজনের প্রাথমিক চিকিৎসাকারী দল এবং ছয়জনের একটি করে ওয়াটার রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব এলাকায় রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত ১০ হাজার ৬০৩ ভলান্টিয়ার।

   


পাঠকের মন্তব্য