মাদ্রাসার শিক্ষকের বলাৎকার দেখে ফেলায় শিশুকে হত্যা 

শিক্ষক (কারি) মো. হেদায়েতুল্লাহ (২৬)

শিক্ষক (কারি) মো. হেদায়েতুল্লাহ (২৬)

ফরিদপুরের মধুখালীতে পৌর সদরের একটি মাদ্রাসার শিক্ষকের বলাৎকারের ঘটনা দেখে ফেলায় ৭ বছরের এক শিশু শিক্ষার্থীকে নির্মম নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ওই মাদ্রাসা শিক্ষককে আটক করেছে। 

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার মধুখালী পৌরসভার পূর্ব গাড়াখোলা মোহাম্মদিয়া আছিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। মাদ্রাসার ওই শিক্ষকের নাম  মো. হেদায়েতুল্লাহ (২৬)। তিনি পূর্ব গাড়াখোলা মোহাম্মদিয়া আছিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় গত ১৪ দিন আগে শিক্ষক (কারি) হিসেবে নিয়োগ পান। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার পীরের চর গ্রামে।

যাকে হত্যা করা হয়েছে তার নাম ইমানআলী। সে মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের  সমেশকান্দি গ্রামের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রী  হৃদয় মোল্লার ছেলে।

মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জানায়, মো. হেদায়েতুল্লাহ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কারণে আকারণে মারপিট করা হতো এবং অশ্লিল আচরণ করতেন।

শিক্ষক মো. হেদায়েতুল্লাহ মারপিট করাসহ শিশুদের সাথে অশ্লিল আচরণ করার বিষয়টি শিশুদের পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। বিষয়টি জানানো হয় মাদ্রসার মোহাতামিম ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের। এ প্রেক্ষাপটে  সোমবার ওই শিক্ষককে চূড়ান্ত ভাবে বিদায় করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্যবস্থাপনা পরিষদ।

মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সালাম মিয়া জানান, বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় পড়তে আসা শিশু  ইমান আলী ওই মাদ্রাসা শিক্ষকের মারপিট ও অশ্লিল আচরণ সম্পর্কিত বিষয় ফাঁস করে দিতে পারে এ রাগের বশবতী হয়ে মো. হেদায়েতুল্লাহ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাক মুখ চেপে ধরে শিশু ইমানকে হত্যা করে। তাকেও এ ভাবে হত্যা করা হবে এ ভয় দেখিয়ে ওই মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থীকে এ কাজে সহায়তা করতে বাধ্য করেন ওই শিক্ষক। পরে হেদায়েতুল্লাহ সাহায্যকারী শিশুটিকে নিয়ে বাসে উঠে ফরিদপুরের দিকে চলে যান। 

মাদ্রাসার অপর শিশুদের কাছ থেকে খবর পেয়ে মাদ্রাসার আরেক শিক্ষক মোটরসাইকেল নিয়ে মাঝকান্দি এলাকায় বাসটি আটকে হেদায়েতুল্লাহকে এবং ওই শিশুটিকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। পরে মধুখালী থানা পুলিশ এসে হেদায়েতুল্লাহকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। শিশু শিক্ষার্থী ইমান আলীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনেরা মাদ্রাসায় ভিড় জমায়। পরে তারা মাদ্রাসার একটি কক্ষ থেকে ইমান আলীর রাশ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ লাশটি ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। 

ওই মাদ্রসার মোহতামিম শামসুল হক বলেন, হেদায়েতুল্লাহকে ১৪ দিন আগে মাদ্রাসার কারি হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে শিশুদের মারপিট ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ ওঠে। এজন্য তাকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। তাতেও কাজ না হওয়ায় এজন্য তাকে চাকুরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে শিশু শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী মাদ্রাসায় গেলে মাদ্রাসা তালা দিয়ে শিক্ষকসহ অন্যরা পালিয়ে যান। 

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে মধুখালী থানার পুলিশ ওই মাদ্রাসা শিক্ষক এবং সাথে নিয়ে যাওয়া শিশুটিকে থানায় নিয়ে আসেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাদ্রাসা শিক্ষক হেদায়েতুল্লাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সহকারি পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর বলেন, হত্যা ছাড়াও ওই মাদ্রাসার আরেকটি শিশুকে ধর্ষণ করেছেন ওই শিক্ষক। সে ব্যাপারেও আইনহত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

   


পাঠকের মন্তব্য