ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে

বাংলাদেশ নিয়ে বাইডেনকে মোদির পাঁচটি বার্তা 

জো বাইডেন ও নরেন্দ্র মোদি 

জো বাইডেন ও নরেন্দ্র মোদি 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ভারত ত্যাগ করেছেন। আগামীকাল তিনি নিউইয়র্কে পৌছোবেন। ২২ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে তার আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে অন্য সব বিষয় ছাপিয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি এদেশের গণমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির এই সফর ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। 

এই সফরে দুই দেশের মধ্যে অনেকগুলো ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। কিন্তু বাংলাদেশের আগ্রহ মাকিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বৈঠক নিয়ে নয়, বরং এই বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ নিয়ে কি কথা বলেন তার ওপর এবং এই কথার প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের প্রতি মনোভাব কতটুকু কিভাবে পরিবর্তিত হয় সেটি দেখার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। 

ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ নিয়ে মোদি পাঁচটি বার্তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দেবেন। এই পাঁচটি বার্তার মধ্যে থাকবে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অবস্থান এবং ভারত প্রত্যাশা করবে এই অবস্থানগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্র সহমত পোষণ করুক। যে পাঁচটি বার্তা বাংলাদেশ নিয়ে মোদি দেবেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেঃ

১. বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ: বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীন ব্যপার। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ সকল গণতান্ত্রিক দেশই প্রত্যাশা করে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে। কাজেই সরকারের ওপর আস্থা রাখতে হবে। শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ হয় কিনা। নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করল না করল এটি ঐ দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কাজেই এই বিষয়ে কোনো দেশের পরামর্শ দেয়া বা চাপ সৃষ্টি করাটা সমীচীন হবে না। 

২. চীনের সঙ্গে সম্পর্ক: ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের জন্যই বাংলাদেশের সাথে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি একটি উদ্বেগজনক ঘটনা। ভারত এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে এ নিয়ে বিভিন্নভাবে কথাবার্তা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ সরকার আশ্বস্ত করেছে যে, তারা আস্তে আস্তে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার এটাও বলেছে, চীনের সাথে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। চীন বাংলাদেশের একটি অর্থনৈতিক অংশীদার। এটুকুই বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্কের ভিত্তি। তাই বাংলাদেশের পরবর্তি নির্বাচনে ভারত দেখতে চায় চীন এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক কোন দিকে অগ্রসর হয় এবং এখানে যেকোনো ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ভারতের রয়েছে।
 
৩. আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ দমন: ভারত মনে করে যে আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের মত একটি দল ক্ষমতায় থাকা উচিত। সন্ত্রাসবাদ দমন, জঙ্গীবাদ দমন এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণেই এখন পর্যন্ত এই দেশটিতে সান্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রিত। এটি সারা বিশ্বের জন্যই ইতিবাচক। কাজেই জঙ্গীবাদ দমনের ক্ষেত্রে এই সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের অভিন্ন ভাবে সমর্থন করা উচিৎ।

৪. সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান: ভারত মনে করে যে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়েছে এবং সেই শক্তিকে দমানোর জন্য বর্তমান সরকারকেই সহায়তা করতে হবে। কারণ বাংলাদেশে যদি সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটে সেটি এই উপমহাদেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি এবং বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। আফগানিস্তানের ঘটনার পর উপমহাদেশের সবগুলো দেশই সাম্প্রদায়িক উত্থানের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই ঝুঁকি কমানোর জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই সহযোগিতা করা দরকার। 

৫. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ যেন বাংলাদেশে ক্ষুণ্ণ না হয় এবং বাংলাদেশের সরকার যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেয় সেজন্য ভারত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলবে বোঝাপড়া করবে।

মূলত এই পাঁচটি বার্তা মোদি জো বাইডেনকে দেবেন এবং এর ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে।

   


পাঠকের মন্তব্য