শিশুদের সঠিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম খুব জরুরি

বয়সভেদে শিশুদের ঘুমের পরিমাণ

বয়সভেদে শিশুদের ঘুমের পরিমাণ

শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা ও মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম খুব জরুরি। বয়সভেদে শিশুদের ঘুমের পরিমাণ ও ভালো ঘুমের জন্য করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামীমা ইয়াসমীন।

সোনামণিদের ঘুম নিয়ে মায়েদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কেননা শিশুদের ঘুমের সঙ্গে বড়দের ঘুমের ধরন ও সময়ে বেশ পার্থক্য রয়েছে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ছয় থকে আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি। শিশুদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণটা বয়সভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়।

শিশুদের সুস্থ শারীরিক বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্যও ঘুম জরুরি। 

কোন বয়সী শিশুর কতটা ঘুমের প্রয়োজন

একটি শিশু জন্মের পর মোটামুটি সারা দিনই ঘুমায়। শিশুদের প্রথম এক মাস দৈনিক ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। এই সময় শিশুরা সাধারণত একটানা দীর্ঘসময় ঘুমায় না।

কারণ পাকস্থলী এ সময় ছোট থাকে। ফলে তাদের খুব দ্রুত খিদে পায়। বারবার ঘুম থেকে জেগে উঠে। এক থেকে চার মাস বয়সী শিশুদের দৈনিক ১৪-১৫ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন হয়।

এই সময় শিশুর শরীর ধীরে ধীরে চারপাশের পরিবেশ দিন-রাতের সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে থাকে। তাই একটানা ঘুমের সময় দীর্ঘ হয়। চার মাস থেকে এক বছর বয়সী বাচ্চাদের ঘুম অনেকটা বড় মানুষদের মতোই হয়ে থাকে। এসময় রাতে বেশি ঘুমায়। তবে দিনরাত মিলিয়ে এই বয়সী শিশুদের ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট।

শিশুদের ঘুমের সমস্যা কেন হয়

আজকাল শিশুর ঘুমের সমস্যা খুব কমন একটি বিষয়। প্রথমেই বুঝতে হবে শিশু আসলে কেন ঘুমাতে চাচ্ছে না। শিশুর ঘুম অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। ঘরে যদি বেশি আলো থাকে, তাহলে অনেক শিশু ঘুমাতে চায় না। ঘরে যদি টেলিভিশন চলে তাহলেও শিশুরা ঘুমাতে চায় না। যে বাচ্চাদের দোলনায় ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস করা হয় সেই বাচ্চাদের বিছানায় শোয়ালেই জেগে যায়। অনেক সময় ডায়াপারের অস্বস্তির জন্যও বাচ্চাদের ঘুমে সমস্যা হয়। ডায়াপার যদি ভেজা থাকে বা খুব বেশি টাইট হয় সে ক্ষেত্রে বাচ্চারা অস্বস্তি বোধ করে। অনেক বাচ্চারই কোলে বা কাঁধে ঘুমানোর একটা অভ্যাস থাকে। এদের বিছানায় শোয়ালেও ঘুমাতে চায় না। তা ছাড়া আরো নানা কারণে শিশুরা ঘুমাতে চায় না। অসুস্থতা, দিনের বেলা বেশি ঘুম, স্মার্টফোন বেশি দেখা এসব কারণেও শিশুর ঘুমের সমস্যা হতে পারে। 

শিশুর পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য করণীয়

শিশুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন ঘুমানোর জন্য নিয়ে যেতে হবে। ঘুমের জন্য দারুন সহায়ক একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট ঘরে তাকে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। শোয়ার ঘরটা যেন হালকা অন্ধকার হয়। ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে থেকেই ঘরের আলো কমিয়ে দিতে হবে। গরমের দিনে বাচ্চাকে ঘুমানোর আগে হালকা নরম সুতি কাপড় বা গামছা দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিলে শরীরে আরাম বোধ করবে। এতে ঘুমও ভালো হবে।

শীতের দিন হালকা ভারী কাপড় পরাতে হবে। তবে খুব বেশি ভারী কাপড় পরানো উচিত নয়। কারণ শীতে এমনিতেই কম্বল বা লেপ ব্যবহার করা হয়।

শিশুকে দিনের বেলা খেলাধুলার অভ্যাস করাতে হবে। এতে শিশুর শরীর ক্লান্ত হয় আর রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চায়। ঘুমানোর অবস্থার ওপরও শিশুর সঠিক ঘুম নির্ভর করে। শিশুকে উপুড় করে শোয়ানো যাবে না। উপুড় করে শোয়ালে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে, বুকে চাপও লাগতে পারে। শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো খুব পাতলা বালিশে ঘুমানোর অভ্যাস করানো। শিশুর যদি ইনসমিয়া থাকে, তাহলে ঘুম বারবার ভেঙে যেতে পারে। এ জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

   


পাঠকের মন্তব্য