সাঈদী সমাচার; একজন ধর্মব্যবসায়ীর উত্থান : আসিফ নজরুল

অধ্যাপক আসিফ নজরুল

অধ্যাপক আসিফ নজরুল

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সোমবার (১৪ আগস্ট) মারা গেছেন। এ ঘটনায় ৩৪ বছর আগের লেখা আসিফ নজরুলের সেই প্রতিবেদনটি সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

তিন দশকেরও বেশি সময় আগে আসিফ নজরুলের লেখাটির শিরোনাম ‘সাঈদী সমাচার। একজন ধর্মব্যবসায়ীর উত্থান।’
 
আসিফ নজরুলের লেখার সূচনায় বলা হয়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী-বিরোধী সাম্প্রতিক গণবিক্ষোভের মধ্য দিয়ে এ দেশে মওদুদীবাদ ও ধর্ম ব্যবসার রাজনীতি যে অগ্রহণযোগ্য, আবারো প্রমাণিত হয়েছে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর জামাতের মজলিসে শুরায় সাঈদীর অন্তর্ভুক্তির পর পরই দেশের আলেম সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সাঈদীর বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠেন। সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামাতের মঞ্চনায়ক সাঈদীর বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত জনমত গড়ে ওঠে। দলমত নির্বিশেষে সকল মহলের বিরোধিতার মুখে সিলেট থেকে সাঈদীকে বিতাড়িত করা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে তার মাহফিলের অনুমতি প্রত্যাহার করা হয়। নাছোরবান্দা সাঈদী তারপরও গোপনে রাতের অন্ধকারে কিছু স্থানে প্রবেশ করেন। কড়া পুলিশ প্রহরায়, জামাতের সশস্ত্র ক্যাডারদের উপস্থিতিতে বক্তব্য রাখেন।

এসব ম্রিয়মান মাহফিলের চরিত্র এবং ক্ষীণত্ব সাঈদীর ধর্মব্যবসায়ী স্বরূপকে আরো প্রকাশ্য, খোলামেলা করে তোলে। সমালোচনায়, আন্দোলনে, হরতালে সাঈদী একনিমিষে উঠে আসেন গোলাম আজমের মতো গণধিকৃত পরিচিতিতে।

আসিফ নজরুল লিখেছেন, বিভিন্ন সূত্রের দেয়া তথ্যানুযায়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে কণ্ঠ সম্পদকে অবলম্বন করে সাঈদী পিরোজপুরের গড়ের হাটে সুর করে আতর, তসবিহ, ধর্মীয় পুস্তক বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তার বিরুদ্ধে লুটপাট ও ডাকাতির অভিযোগও রয়েছে।

‘এ প্রসঙ্গে মাসিক নিপুণ পত্রিকার জুলাই ৮৭ সংখ্যায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পাড়েরহাট ইউনিনের উদ্‌ধৃতি দিয়ে বলা হয়..... সাঈদী স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক-হানাদারবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় লিপ্ত ছিলেন। তিনি ধর্মের দোহাই দিয়ে গণিমতের মাল হিসেবে পাড়েরহাট বন্দরের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর লুট করেছেন। এবং মদন নামের এক হিন্দু ব্যবসায়ীর দোকানঘর ভেঙে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর সাঈদী দীর্ঘ সময় পালিয়ে থাকেন এবং ১০ বছর পর নিজ গ্রামে আসেন।

‘পাক্ষিক তারকালোকের ৪ বর্ষ ১৮ সংখ্যায় দেয়া সাক্ষাৎকারে সাঈদী স্পষ্টভাবে বলেন—আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। যারা এ অভিযোগ করেন তাদের আরো মনোযোগ দিয়ে আমার বক্তব্য শুনতে অনুরোধ করবো।’

সাঈদীর এই মিথ্যাচার ‘ইত্তেহাদুল উম্মাহ’ নামক একটি ধর্মীয় সংগঠন গড়াকালীন সময়েও দেখা যায়। ৮১ সনের শেষ দিকে বায়তুশ শরফের পীর সাহেবের খানকাতে এক গোপন বৈঠকে সংগঠনটি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়। সেই বৈঠকে বায়তুশ শরীফের পীর, শর্ষীনার মেজো হুজুর, যশোরের খাজা সাঈদী পীর, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং জামাতের গোলাম আজম উপস্থিত ছিলেন।

   


পাঠকের মন্তব্য