নির্বাচন পর্যন্ত ব্রিকস থেকে দূরে বাংলাদেশ : নেপথ্যে ভারত

ব্রিকস সম্মেলন

ব্রিকস সম্মেলন

প্রশ্ন উঠেছে, ব্রিকসে নতুন ৬ দেশ বাংলাদেশ জায়গা পেল না কেন ? বাংলাদেশের থেকে বেশি গুরুত্ব পেল সৌদি আরব ? নরেন্দ্র মোদী চীনের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন এ কোন নতুন খেলা। ব্রিকসের ১৫ তম বৈঠকে জোটটির সাথে বাংলাদেশের যুক্ত না হওয়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে অর্থনীতি এবং ভূ-রাজনীতিকেই দায়ী করছে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

ব্রিকস সম্মেলনের শেষ দিনে ছয়টি দেশকে এই জোটে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, এসব দেশ হচ্ছে সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনা, মিশর এবং ইথিওপিয়া কিন্তু বাংলাদেশের নাম শোনা গেল না সেখানে। সৌদি আরব কী তাহলে চীনের কাছে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ? ব্রিকসের সদস্যপদ নিয়ে মারাত্মক আশা করেছিল ঢাকা। তাহলে এমন কি ঘটে গেল ?  
 
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জিনপিংয়ের বৈঠকে তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্রিকসে অন্তর্ভুক্তিতে চীনের পুরোপুরি সমর্থন থাকবে। বরং এখানে ভারতকে নিয়ে এবার যে প্রেডিকশন করা যায়নি নরেন্দ্র মোদী সেটাই করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।   

এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই কিন্তু অনেকেই হতবাক। কারণ ব্রিকসের সম্প্রসারণ নিয়ে ভারত বাধা না দিলেও বেশ কিছু শর্ত রেখেই আসছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তবে এখানে একটু থামতে হবে ভারত বাধা দেয়নি ঠিকই‌ কিন্তু দিল্লি বেশ সতর্ক। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোত্রা জানিয়েছেন নতুন এই জোট যেন কোনওমতেই মার্কিন বিরোধী চিন-রাশিয়াপন্থী হিসাবে চিহ্নিত না হয়ে যায় সেদিকেও কড়া নজর রাখবে দিল্লি। বাংলাদেশকে ব্রিকসে ঢোকানোর জন্য চীন কী এক্সট্রা এফোর্ট দিল না ? 

অপরদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নানা বিষয়ে টানাপোড়েন চলছে। এই টানাপোড়েনের মধ্যে যদি বাংলাদেশ ব্রিকস-এ যোগ দিতো, সেক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও নতুন নতুন সঙ্কট তৈরি হতে পারতো। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের মনোভাব আনুষ্ঠানিকভাবে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে। 

ভারতের গবেষণা প্রতিষ্ঠা অবজারভার ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যা, আয়তন এবং অর্থনৈতিক আকারের দিক থেকে ব্রিকস জোট বর্তমান বিশ্বের একটি বড় শক্তি। ২০১৪ সালের হিসেবে, ব্রিকসের পাঁচটি সদস্য দেশে প্রায় ৩২০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, ব্রিকস ক্রমশ একটি মার্কিন অর্থনীতি বিরোধী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আর এই জোটের প্রধান দুই দেশ রাশিয়া এবং চীন এটিকে মার্কিন এবং পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে একটি অর্থনৈতিক জোট হিসেবে তৈরি করতে চায়। ভারত এর বিরুদ্ধে ছিল, ভারত এটিকে এখনই কোনো রাজনৈতিক আবরণ দিতে রাজি নয় এবং এটিকে মার্কিন বিরোধী জোট হিসেবে রাখতেও রাজি না।

ব্রিকসে এবার বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তি না হওয়ার বিষয়ে হতাশ হওয়ার কিছুই নেই; তবে তার আগে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতেই হবে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত বিষয়টি নিয়ে একটি সমঝোতা করার সুযোগ পাবে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক মহল।

সর্বশেষ নতুন সদস্য দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্ত না হওয়া নিয়ে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি বাংলাদেশ। কিন্তু কী কারণে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হল না তার এখনও পর্যন্ত কোনও কারণ জানা যায়নি। 

সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যে দেশগুলো আবেদন করেছে তাদেরকে পর্যায়ক্রমিকভাবে ব্রিকস-এর সদস্য পদ দেওয়া হবে। সেই নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতেই হবে। এটাই সত্যি; কৌশলগত কারনেই গুনে গুনে পা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ।

   


পাঠকের মন্তব্য