বেগম রোকেয়ায় অনুপ্রাণিত হয়ে সফল মোকছুদা পারভীন

সিনহা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মোকছুদা পারভীন

সিনহা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মোকছুদা পারভীন

জন্মের পর থেকেই শুনেছি বেগম রোকেয়া নারীদের অধিকার আদায়ে কি কি কাজ করেছেন। ছোট থেকেই বেগম রোকেয়াকে ধারণ করেছি নিজের ভিতর। তাইতো আজ আমি এতদূর আসতে পেরেছি। কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে পার্ক মোড় এলাকায় অবস্থিত সিনহা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মোকছুদা পারভীন। 

মোকছুদা পারভীনের জন্মস্থান নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার পায়রাবন্দ অঞ্চলের মাঠেরহাট এলাকায়।ছোট থেকেই এ অঞ্চলে তার বেড়ে ওটা ও প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ, তিনি স্থানীয় এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও নানাবিধ কারণে তার পড়াশোনা সেখানেই থমকে যায়।তবে থমকে যায়নি মোকসুদার মনোবল, যাকে ছোট থেকে ধারণ করে এসেছেন,যার কর্মকাণ্ডের কথা অনুপ্রাণিত করে তুলেছিলো ঘোটা বাঙালি জাতিকে সেই নারীকে ধারণ করে, নিজের উপরে বিশ্বাস অর্জন করে নিজেই উপার্জন করতে শুরু করেন নিজের জন্য।

তিনি প্রায় ৫ বছর বেসরকারি একটি সংস্থার পাঠাগারে চাকরি করেছেন।সেখানে শিক্ষা দিয়েছেন কোমলমতি শিশুদের। মেয়েদের আলোকিত করার যে লক্ষ্যে রোকেয়া প্রথম পদক্ষেপ তুলেছিলেন সেই পথেই যেন হেটেছেন এ নারী। তবে বিয়ের পর তার এই যাত্রার ইতি টানতে হয়, করতে হয় স্বামী সংসার।কিন্তু বিয়ের পরও এ  নারী থেকে থাকেনি। নিজে উপার্জন করতে চেয়েছেন সবসময়।

স্ত্রীর নানারুপ গুণ ও দক্ষতা দেখে স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিকও তাকে বাধা দেননি।স্ত্রীর পরামর্শেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় যুক্ত করেন স্বামী।অভাবের সংসারে এরপর থেকে যেন আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে।একটু একটু করে এ ব্যবসার মুনাফা আজ তাকে পৌঁছে দিয়েছে নতুন এক মাত্রায়। বর্তমানে তিনি প্রতিমাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় করেন।স্বাদ আর মানে অনন্য হওয়ায় ক্রেতাও প্রচুর।

মোকছুদা পারভীন বলেন, 'আমার  ছোট বেলায় আমি মা-বাবার মুখে বেগম রোকেয়া সম্পর্কে শুনেছি,তার কীর্তি যে দেশ জুড়ে বিদেশে তা জেনেছি স্কুলে এসে।এই নারী আমাদের পায়রাবন্দের কি পরিমাণ পরিবর্তন এনে দিয়েছে তা সচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করার মত না।যেখানে অন্যান্য এলাকার নারীরা এখনও ঘরবন্ধী সেখানে আমার পায়রাবন্দের নারীরা কাজ করে উপার্জন করছেন, নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছেন।'

তিনি বলেন, বেগম রোকেয়াকে ধারণ করেই আমি আজ এতদূর আসতে পেরেছি।অভাবের সংসারে দূর হয়েছে এই অভিশাপ। অন্ধকার থেকে দেখছি আলোর মুখ। সবসময়ে চাইতাম আমিও কিছু করব, আজ মনে হয় কিছু করতে পেরেছি।

তিনি আরো বলেন,পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কর্মক্ষম হলে ও সকল সুবিধা পেলে কোনো বাধায় আসলে বাধা মনে হয়না,সংসারে কোনো অভাবই বেশিদিন টিকতে পারেনা।

এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,বেগম রোকেয়া আমাদের এলাকার মানুষের কাছে এক অন্যরকম নাম,অন্যরকম পাওয়া। এই দেখেন না বর্তমানে আমার এই হোটেল দিয়েই ৯জন মানুষের সংসার চলছে। সব কর্মচারীদের টাকা পরিশোধ করেও আজকে আমি প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা উপার্জন করি।বেগম রোকেয়া সম্পর্কে না জানলে হয়তো আমার দ্বারা এটা সম্ভবই হতো না।

এ নারীর সাথে কথা বলে জানা যায়,২০১১ সাল থেকে তিনি এই ব্যবসার সাথে নিযুক্ত আছেন। নিজের পাশাপাশি নিজের মা-বোনকেও করে তুলেছেন সাবলম্বী। তার এই সব কিছুর পেছনে সবচেয়ে বেশি রয়েছে  বেগম রোকেয়ার বলে তিনি মনে করেন।

   


পাঠকের মন্তব্য