৭ জানুয়ারির নির্বাচন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কারণ 

আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন

আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন

আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে এখন দিল্লিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই বৈঠকে মার্কিন কূটনীতিকরা ছাড়াও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা ভারতের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে একটি কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

কোন কোন বিষয়গুলো থাকলে আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে সকল দেশ একসাথে গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি দেবে, সেই বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে বৈঠক করছে ভারত। আর এই সমস্ত বৈঠকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অভিন্ন মাপকাঠি তৈরি করার কাজ প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। 

যে সমস্ত মাপকাঠি থাকলে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মহল স্বীকৃতি দেবে এবং গ্রহণযোগ্য হিসেবে মেনে নেবে তার মধ্যে রয়েছে- 

১. অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন: নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক এবং গ্রহণযোগ্য হতে হবে যাতে এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়। একমাত্র অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে। সেক্ষেত্রে গড়ে অন্তত চল্লিশ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি থাকতে হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। যদি চল্লিশ শতাংশ বা তার অধিক ভোটার ভোট দেয় তাহলে এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি পাবে। সবগুলো উন্নয়ন অংশীদারই মনে করেন যে, একটি দেশে যদি চল্লিশ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি থাকে তাহলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে, এটাই আন্তর্জাতিক রীতি।

২. সুষ্ঠু নির্বাচন: নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু। সকল রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে তারা যেন সমান সুযোগ সুবিধা পায়, ভোটে যেন কোনও কারচুপি না হয় এবং নির্বাচনে জনগণ যেন ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত না হন সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আর এই কারণেই এবার নির্বাচনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পর্যবেক্ষকরা পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের পর্যবেক্ষণে যদি এই সম্পর্কে ইতিবাচক রিপোর্ট পাওয়া যায়, তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা পেতে কোনও সমস্যা হবে না। 

৩.  প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা: নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বড় ধরনের কোনো ব্যত্যয় দেখা যায়নি। আর এটি যদি ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকে সেক্ষেত্রে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার কোনও সংকট হবে না। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে এবং এটি যদি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দৃশ্যমান হয়, তাহলে এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিতে পশ্চিমা দেশগুলো কার্পণ্য করবে না।

৪. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা: এই নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও নজরদারির মধ্যে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনও প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছে কি না বা কাউকে জোর করে হারিয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছে কি না, সে বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখছে। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্যতম শর্ত হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা।

৫. নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা: নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে পরিচালনা করে, কীভাবে তাদের নিরপেক্ষতা রক্ষা করে, সেদিকেও নজর রাখছে সমস্ত পশ্চিমা দেশগুলো। আর ভারতও মনে করে যে, নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর এ কারণেই নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করল তার ওপর নির্ভর করছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা। 

এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাজে সন্তুষ্ট পশ্চিমা দেশগুলো এবং ভারত। সবাই মনে করে যে, যেভাবে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র অবস্থান রেখে নির্বাচন পরিচালনা করছে তা ইতিবাচক। এই ধারা ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে পারলে নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতার কোনও সংকট হবে না।

মূলত এই পাঁচটি লক্ষ্য যদি অর্জন করতে পারে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন, তাহলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। এবং, সেক্ষেত্রে কোনও দেশেই নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করবে না। এমন একটি অভিন্ন অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে ভারতসহ বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার রাষ্ট্রগুলো।

   


পাঠকের মন্তব্য