ডলারের দাম বাড়বে কমবে টাকার প্রবাহ

ডলারের দাম বাড়বে কমবে টাকার প্রবাহ

ডলারের দাম বাড়বে কমবে টাকার প্রবাহ

বৈশ্বিক ও দেশীয়ভাবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলার কৌশল নিয়ে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মেয়াদের মুদ্রানীতি আগামী বুধবার ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানুয়ারি-জুন মেয়াদের এ মুদ্রানীতিতে প্রধান চারটি চ্যালেঞ্জ শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-ডলার সংকট মোকাবিলায় বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানো, খেলাপি ঋণ কমানো, ব্যাংকগুলোতে তারল্যের জোগান বাড়ানো এবং মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে মুদ্রানীতিতে বেশ কিছু নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে আরও বাজারভিত্তিক করা হবে। এতে বাজারে ডলারের দাম আরও বাড়বে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার কমাতে টাকার প্রবাহ কমানো হবে।

রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় নতুন মুদ্রানীতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। পর্ষদ ওই নীতিকে অনুমোদন করেছে। আগামী বুধবার ১৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এই নীতি ঘোষণা করবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে ব্যাংকের পর্ষদের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

মূত্র জানায়, এবারের মুদ্রানীতিতেও মূল্যস্ফীতির হার কমাতে বাজারে টাকার প্রবাহে লাগাম টানা হবে। এর মাধ্যমে চাহিদা কমানো হবে। ফলে বিলাসবহুল খাতে ব্যয় কমবে। এ খাতে ঋণের প্রবাহও কমানো হবে। একই সঙ্গে উৎপাদন খাতে ব্যয় ও ঋণের প্রবাহ বাড়ানো হবে। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে।

এদিকে মূল্যস্ফীতির হার এখন নিম্নমুখী রয়েছে। ডিসেম্বরে এ হার কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশে নেমেছে। আগামী জুনের মধ্যে এ হার আরও কমে আসবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত অর্থবছর থেকে মূল্যস্ফীতির হার কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করে আসছে। এতে সুদের হার বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খাতে ঋণের খরচসহ অন্যান্য খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে এ খাতে ঋণের জোগানও কমেছে। এতে উৎপাদন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বাজারে ডলারের সংকট কাটাতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানো হবে। এ লক্ষ্যে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হবে। এ জন্য ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে আরও বাজারভিত্তিক করা হবে। ফলে বাজারে ডলারের দাম আরও বাড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) নির্ধারণ করা ডলার কেনার দাম সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা ও বিক্রির দাম সর্বোচ্চ ১১০ টাকা। কিন্তু এই দামে বাজারে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে গড়ে ১২২ থেকে ১২৬ টাকা করে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে। এদিতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) থেকেও ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার চাপ দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দামে নিয়ন্ত্রণ আরও শিথিল করতে যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, ডলারের দাম আরও কিছুটা বাড়লে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হবেন এবং রপ্তানি আয়ও কিছুটা বাড়বে। এতে বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়বে।

ব্যাংকিং খাতে ডলার সংকটের কারণে তারল্য সংকট বেড়েছে। ব্যাংকগুলো নগদ টাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনায় তারল্যের একটি বড় অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য কমছে। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় প্রায় প্রতিদিনই ১২ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে। এ সংকট মেটাতে ব্যাংকগুলোর সুদের হারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও শিথিল করা হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদের হার আরও বাড়াবে। ফলে সব ধরনের সুদের হার আরও বাড়বে। এতে আমানত ও ঋণের সুদ হারও বাড়বে। এতে গ্রাহকরা ব্যাংকে বেশি আমানত রাখতে উৎসাহিত হবেন। একই সঙ্গে ঋণের সুদহার বাড়ায় অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণের জোগান কমবে। এতে তারল্য প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে আমানতের চেয়ে ঋণ বিতরণের হার বেশি। যে কারণে ব্যাংকগুলোতে যে হারে আমানত বাবদ টাকা আসছে তার চেয়ে বেশি ঋণ বাবদ টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে।

বর্তমানে বৈশ্বিক ও দেশীয় মন্দায় উদ্যোক্তারা অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। শতকরা হারে কিছুটা কমলেও পরিমাণে বেড়েছে। খেলাপি ঋণে লাগাম টানতে ঋণ আদায় বাড়াতে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ তৈরি করা হবে। এতে খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিসহ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেশি হলে তিরস্কার করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ তৈরি করা হবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই একটি নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, ডলারের দামকে বাজারভিত্তিক করা হবে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। মূল্যস্ফীতির হার কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ হার পর্যায়ক্রমে ৬ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে।

   


পাঠকের মন্তব্য