বেনজীরের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ  

সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ

সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ

ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারক মোহাম্মদ আসামাছ জগলুল হোসেনের সভাপতিত্বে আদালত তার সম্পদ অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ৮৩টি নথি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন। সাবেক পুলিশ প্রধানের অবৈধ সম্পদ সংগ্রহের ক্রমবর্ধমান অভিযোগের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ।

দুদকের তদন্তে বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন বিস্তৃত এবং কথিত অবৈধ সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনের দ্বারা প্ররোচিত হয়। "বেনজির হাউসে আলাদিনের বাতি" শিরোনামের প্রতিবেদনে আহমেদ এবং তার পরিবারের সাথে যুক্ত বেশ কয়েকটি উচ্চ-মূল্যের সম্পত্তি এবং বিনিয়োগের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

বেনজীর আহমেদের সাথে যুক্ত গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে একটি বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র। সারা দেশে অন্তত ছয়টি কোম্পানি তার স্ত্রী এবং দুই মেয়ের নামে রয়েছে, যার বিনিয়োগ ৫০০ কোটি টাকার বেশি। সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ঢাকার অভিজাত এলাকায় দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি এবং জমি, পূর্বাচলে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি যার মূল্য আনুমানিক ৪৫ কোটি টাকা এবং অতিরিক্ত জমি রয়েছে ২২ কোটি টাকা। 
 
তার মেয়েদের বেস্ট হোল্ডিংস এবং পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ানে ২০০,০০০ শেয়ার রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে এই সম্পদগুলি পুলিশ বাহিনীতে তার 34 বছরের কর্মজীবনে বেনজির আহমেদের অর্জিত আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে তার মোট বেতন এবং ভাতা ছিল ১.৮৪ কোটি টাকা। 

এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য দুদককে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সৈয়দুল হক সুমন। চিঠিটি আহমেদের পরিচিত আয় এবং তার পরিবারের কাছে থাকা উল্লেখযোগ্য সম্পদের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে, সম্পদ সঞ্চয় করার জন্য তার সরকারী পদের অপব্যবহারের পরামর্শ দেয়।

এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ মে বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশে আহমেদের সম্পদ ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই পদক্ষেপটি সাবেক আইজিপির আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে দুদকের চলমান তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ চিহ্নিত করেছে।

বেনজির আহমেদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা দুর্নীতি মোকাবেলায় সরকারের প্রতিশ্রুতিকে স্পষ্ট করে, এমনকি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যেও। এটি এই জাতীয় সমস্যাগুলিকে আলোতে আনতে মিডিয়া এবং আইন পেশাজীবীদের ভূমিকাও তুলে ধরে। দুদকের তদন্তে আহমেদের সম্পদের বৈধতা নির্ধারণের জন্য তার আর্থিক রেকর্ড এবং সম্পত্তি অধিগ্রহণের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা জড়িত থাকতে পারে।

বেনজির আহমেদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদালতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বিশদ অভিযোগ এবং পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রাক্তন আইজিপির বিরুদ্ধে দাবীর গুরুত্ব প্রতিফলিত করে। যেহেতু দুদক তার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে, এই মামলাটি সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে অধিকতর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার নজির স্থাপন করতে পারে।

   


পাঠকের মন্তব্য