জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিবের নামে প্রতারনা ও প্রক্সিতে বরখাস্ত রঞ্জু ও রিপন

রঞ্জু আহমেদ ও রিপন আহমেদ

রঞ্জু আহমেদ ও রিপন আহমেদ

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাম ভেঙে বিভিন্ন জায়গা প্রতারণা ও বাংলাদেশ লোক প্রশাসন কেন্দ্র সাভার প্রক্সি পরিক্ষা ধরা খেয়ে সাময়িক বরখাস্তকারিরা হলেন, অফিস সহায়ক মোঃ রঞ্জু আহম্মেদ, রিপন আহম্মেদ, লাইব্রেরি এটেনডেন্ট ও আতিকুর রহমান, অফিস সহায়ক। 

নিয়োগ বাণিজ্য ও অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের পেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব দপ্তরে সাময়িক বরখাস্তকৃত অফিস সহায়ক ও লাইব্রেরি এটেনডেন্টের হুমকিতে আতঙ্কিত ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ উঠেছে, বরখাস্ত হয়েও তারা ভুক্তভোগীদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। অপরদিকে স্বপদে ফিরতে এই প্রতারক চক্র নানা তদবির চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

অভিযোগ সুত্রে পাওয়া তথ্যমতে, অভিযোগকারী এই মর্মে অভিযোগ করেন, আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ অভিযোগকারী অভিযোগ করিতেছি যে, মাননীয় সিনিয়র সচিব মহোদয় আপনার দপ্তরে সাময়িক বরখাস্তকৃত অফিস সহায়ক, মোঃ রঞ্জু আহম্মেদ, পিতা- মৃত আকুল কালাম, গ্রাম- কাঁচির, ডাকঘর- ঘোগাদহ, থানা- কুড়িগ্রাম, জেলা- কুড়িগ্রাম। যে দীর্ঘদিন যাবৎ আপনার দপ্তরের অফিস সহায়ক পদে চাকুরী করিয়া আসিতেছে। সে বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন এবং আমাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে আমাদের নিকটতম লোকজনের কাছ থেকে আপনার পরিচয় ও আপনার ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন দপ্তরের চাকুরীর কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক চক্র। এছাড়া আমরা জানতে পারি যে, আপনার ই-মেইল আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানদেরকে চাকুরীর সুপারিশ পত্র পাঠাতেন এবং আপনার পরিচয় দিয়ে তাদের সাথে মুঠোফোনে কথা বলতেন।

অভিযোগকারী আরো উল্লেখ করেন যে, এইভাবে প্রতারণার মাধ্যমে চাকুরী দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন। আমার এক ভাগিনার কাছ থেকে ফায়ার সার্ভিসে চাকুরী দিবে বলে ১৮ লক্ষ টাকা নেন। সে চাকুরী দিতে না পেরে নানান টালবাহানা শুরু করছে। পরবর্তীতে বিচার শালিশ করে ১ বছর পর অর্ধেক টাকা ফেরৎ দিয়েছে। বাকি টাকা আর দেয় নাই। আমার পাশের উপজেলায় আমার পরিচিত আরো ২ জন ব্যক্তির নিকট বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে অফিস সহায়ক পদে চাকুরী দিবে বলে ৫০ লক্ষ টাকা চুক্তি করেন। ৩০ লক্ষ টাকা আপনাকে দিবে বলে আমাদেরকে জানান। সে বলে 'স্যারকে ৩০ লক্ষ টাকা না দিলে আপনাদের চাকুরী হবে না' এবং পক্সির মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে দিবেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষ বিশ্বাস করে গরু, ছাগল, জায়গা বিক্রিয় করে জনাব রঞ্জু আহম্মেদ এবং জনাব রিপন আহম্মেদকে চাকুরীর জন্য টাকা দেয়। পরে বিভিন্ন লোকজনের সাথে প্রতারণা করার সময় তার ছোট ভাই সাভার লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে লাইব্রেরী এটেনডেন্ট, জনাব মোঃ রিপন আহম্মেদের জালিয়াতি ধরা পড়ে। জালিয়াতি ও পক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশে লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আরর ১ জনকে অফিস সহায়ক পদে চাকুরীদেন, তার নাম মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, পিতা: মোঃ রেজাউল করিম, জেলা: সাতক্ষীরা। সেই নিয়োগে ১৬ লক্ষ লেনদেন করেন। বিভিন্ন লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে তার জালিয়াতি ধরা পড়ার কারণে বাংলাদেশে লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে অফিস আদেশে ২ জন কর্মচারী-

১) জনাব রিপন আহম্মেদ, লাইব্রেরি এটেনডেন্ট ও  ২) জনাব আতিকুর রহমান, অফিস সহায়ক, ঢাকা কর্তৃক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিগত ২৯শে আগস্ট, ২০২৩খ্রিঃ তারিখে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আপনার দপ্তর কর্তৃক বরখাস্তকৃত অফিস সহায়ক জনাব মোঃ রঞ্জু আহম্মেদকেও সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, মহোদয় সে একজন অফিস সহায়ক পদে কর্মচারী হয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার নিমবাগান এলাকায় বিগত ২০২৩ খ্রি: সালে ১ কোটি টাকা মূল্যের ১টি বাড়ি ক্রয় করেন। এছাড়াও তার বিভিন্ন নামে বেনামে (স্ত্রীও ভাইদের নামে) ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকা জানা রয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি বরখাস্ত হওয়ার কিছু দিন পূর্বে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানতে পারি যে, তিনি মিরপুর-১০-এ একটি জায়গা ক্রয় করার কথা শুনেছি। তাকে জিজ্ঞাসা বাদ করা হলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। বরখাস্ত হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে যে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী স্যার কয়দিন এই চেয়ারে থাকবেন। সে চলে গেলে আমি এই দপ্তরে পুনঃরায় আসবো। সচিব স্যার আমার কিছুই করতে পারবে না। তখন তোমাদেরকে দেখে নিবো। সচিব স্যারের চেয়েও আমার বড় হাত রয়েছে, সে আমার কিছুই করতে পারবে না। সে বিভিন্ন জায়গায় টাকা পয়সা, মাছ, মাংস, চাউল কাজের বুয়া দিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অফিসারদের হাত করে নিয়েছেন। এখন তাদের মাধ্যমে তার সাময়িক বরখাস্ত যাহাতে স্থগিত করা হয় এবং পূর্ণবহাল রাখা হয় তার জন্য সুপারিশ চলিতেছে।

এমতাবস্থায় এই দুর্ণীতিবাজ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে যদি স্থায়ীভাবে শান্তির ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে তারা আরো বেপেরোয়া হয়ে উঠবে। এতে করে সাধারণ জনগন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। স্যার আপনার এবং সরকারের সম্মান যাহাতে ক্ষুন্ন না হয়, সেজন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার নিকট সবিনয় অনুরোধ করছি।

   


পাঠকের মন্তব্য