বনখোকো হাকিম বাহিনীর কবল থেকে বনভুমি উদ্ধারের নির্দেশ

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সরওয়ার আলম এর ঘটনাস্থল পরিদর্শন

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সরওয়ার আলম এর ঘটনাস্থল পরিদর্শন

কক্সবাজারের ঈদগাঁও ইসলামপুর এলাকার আলোচিত বনদস্যু, সার চোরাকারবারি  বনখোকো হাকিম আলী ও তার বাহিনী নাপিতখালী বিটের অধীনে বনবিভাগের প্রায় ৫০ একর বনভুমি দখল ও বিক্রি করেছে। সেখানে ব্যাপক হারে গাছ নিধন, পাহাড় ও মাটি কাটা সহ ঘরবাড়িও তৈরি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই বনবিটের অধীনে ২০০৫- ০৬ অর্থ বছরে স্বল্প মেয়াদী ১০০ হেক্টর সামাজিক বনায়ন করেছিল বনবিভাগ। ওই বনায়ন থেকে ২০১১ সালে ২০ হেক্টর বনায়ন বাতিল করে পুনরায় ২৫ একর দীর্ঘ মেয়াদী বনায়ন করে বনবিভাগ। এসব বনায়ন স্থানীয় উপকারভোগী ২৫ ব্যক্তির নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। এই বনায়নের প্রতি লুলোপদৃস্টি পড়ে বনখেকো হাকিম আলীসহ তার বাহিনীর।

২৫ একরসহ আশপাশের আরও বনভুমি মিলে প্রায় ৫০ একর বনভুমি দখল করে রাখে। ওই হাকিম বাহিনী বনায়ন দখলে নিয়ে উপকারভোগীদের বিভিন্ন ভাবে হুমকিতে রেখে ওই বনভুমিতে জমিদারী শুরু করে হাকিম আলী। বনায়ন ধ্বংস করে পর্যায়ক্রমে স্ট্যাম্প মুলে দখল স্বত্ত্ব বিক্রি করেন হাকিম আলী বাহিনী।

উপকারভোগীদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন উপকারভোগী অভিযোগ করে বলেন, নাপিতখালী বিট কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদের যোগসাজশে হাকিম আলী ও তার বাহিনীর সাবেক চেয়ারম্যান অছিউর রহমানের বড় ছেলে ফিরোজ আহম্মেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামী জসিম উদ্দিন, দেলোয়ার, আবদুর রহিম,  আবছার, আবদু সালাম প্রকাশ মিঙ্গা, আলম,  মনছুর, ইসমাইল সহ আরও বেশ কয়েক জন মিলে বনায়ন কেটে লাখ লাখ টাকা বনভুমি বিক্রি করেন। সশস্ত্র পাহারায় সেখানে অসংখ্য ঘর তৈরি করা হয় এবং পাহাড়ে মাটিও কেটে নালা তৈরী করে বাগান ও বনভুমির ব্যাপক ক্ষতি করা হয়।

তারা আরও জানান, এব্যাপারে বারবার বিট কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলেও তিনি কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো হুমকি দেয় এবং বিট কর্মকর্তা নিজে উপস্থিত থেকে বনভুমি পরিমাপ করে বিক্রি এবং বাড়ি ঘর তৈরীতে সহযোগিতা করেন। ভুমিদস্যু হাকিম বাহিনী ও বনবিট কর্মকর্তার এধরনের কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে বিষয়টি কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্ম কর্তা (ডিএফও) কে অবহিত করেন উপকারভোগীরা।

জানা গেছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ( ৪ঠা মার্চ) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার সহ ফুলছড়ি এসিএফ শীতল পাল, রেঞ্জ কর্মকর্তা হুমায়ুন আহম্মেদ, স্থানীয় ইউপি মেম্বার সাহাব উদদীন সহ বনকর্মীরা। সেখানে গিয়ে বনভুমি দখল, গাছ ও পাহাড় কাটা সত্যতা পেয়ে বনভুমি উদ্ধার, ভুমি দস্যু হাকিম আলীর বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা ও জড়িত নাপিতখালী বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।

ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা হুমায়ুন আহম্মেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বনভুমি দস্যুতায় জড়িত হাকিম আলীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। নাপিতখালী বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ওই বনভুমিতে আর কেউ যাতে ডুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় মেম্বার সাহাব উদদীন ও সিপিজির সভাপতি ফকিরা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ওবাইদুর রহমানকে দখলমুক্ত করার সহযোগীতা ও পাহারায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে ইসলামপুর ইউপির ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য সাহাব উদদীন জানিয়েছেন, বনবিভাগে জমি আবারও দখল নিয়ে সংঘাত হতে পারে।বনবিভাগের সাথে আমরাও পাহারায় রেখেছি, আর যাতে কেউ দখলের সুযোগ না পায়।

এব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার জানান, বনভুমি দখল, বনায়ন ধ্বংস ও পাহাড় কাটায় জড়িত হাকিম আলীসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং বনভুমি দখল উচ্ছেদের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কোন বনভুমিতে অবৈধ দখলদার থাকতে দেয়া হবে না, বনবিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

   


পাঠকের মন্তব্য