মুশতাককে আফ্রিকান বর্বর বললেন তিশার স্বজনরা

খন্দকার মুশতাক আহমেদ এবং সিনথিয়া ইসলাম তিশা

খন্দকার মুশতাক আহমেদ এবং সিনথিয়া ইসলাম তিশা

খন্দকার মুশতাক আহমেদ এবং সিনথিয়া ইসলাম তিশা জুটি বর্তমানে আলোচিত একটি নাম। গত বছরই তিশা বিয়ে ষাটোর্ধ মুশতাকে। ১৮ বছরের তিশাকে বিয়ে করায় প্রতিদিনই সমালোচিত হতে হচ্ছে তাকে। এখনও এ বিয়ে মেনে নেয়নি তিশার পরিবার। শুধু তা-ই নয়, এ বিয়েকা- আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, যা এখনও বিচারাধীন।

তিশার বাড়ি জেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার বকসের হাট উত্তর ঠাকুরগাঁও গ্রামে। এ দিকে খন্দকার তাঁর মেয়েকে ব্ল্যাকমেল করে বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ সাইফুল ইসলামের। 

তিশার বাবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ পাশ করে বর্তমানে ঢাকায় আমদানি রপ্তানির ব্যবসার সাথে জড়িত। আর মা সাবেক ব্যাংকার। পরিবারটিতে শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যাংকার সবই আছে তাদের। শুধু অভাব ছিলো ডাক্তারের। তাই তিশাকে নিয়ে সেই স্বপ্ন বুননে বিভোর ছিলেন তার পরিবার। তিন মেয়ের বড় মেয়ে তিশা অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলামেও ছিলো অনেক ভালো। নাচ, গান, বিতর্ক আর ছবি আঁকাতে সেরা হওয়ায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকেও পেয়েছে পুরস্কার। তাই তিশাকে নিয়ে পরিবারের স্বপ্নটাই ছিল অনেক বেশি। তবে পরিবারের সেই স্বপ্ন এখন ভেঙ্গে খানখান। 

স্বজনরা বলছেন, স্কুলে তাদের স্বপ্নের সারথী হয়ে অভিভাবকের পাশে থাকার কথা। আজ সেই অভিভাবকেই হয়ে উঠলো তাদের সর্বনাশের কারণ। আইডিয়াল স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য ৬৫ বছরের খন্দকার মুশতাকেই হয়ে ওঠে ভক্ষক। যা নিয়ে তিশার পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। 

এবিষয়ে আজকের দপর্ণ পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিশার স্বজনেরা। স্বজনদের অভিযোগ, ব্ল্যাকমেইল করে জোরপূর্বক তিশাকে বিয়ে করেছেন বৃদ্ধ মুশতাক। 

সরেজমিনে ঘুওে, তিশার গ্রামের বাড়ি উত্তর ঠাকুরগাঁও বকসের হাট এলাকায় তাঁর দাদী আমেনা বেগম (৮৬) এর সঙ্গে কথা হয়। সম্পর্ক ভালো থাকায় তিশাকে নিয়ে অভিযোগ এবং আক্ষেপও অনেক বেশি তাঁর দাদীর। 

তিনি বলেন, তিশা-মোশতাকের তানে হামরা সমাজত মুখ দেখাবা পারিনা। কলেজের মহিলা প্রিন্সিপালের সহায়তায় মুশতাক মোর নাতনীক লে পালাইছে। শ্যেলা ফের মোর ছেলে (তিশার বাবা) ওঠে থেকে আনে তালাক দেওয়াছে। পরে ঠাকুরগাঁওত আনিল। ওঠেও মুশতাক কার (মাইক্রোবাস) ধরে এনে নিয়া গেইছে। মুই মোর নাতিন চাহাচু। মুশতাকক চাহু না। বুড়াডা মোর নাতি জামাই হয় এডা মুই সবাইক কহিম। তিশা একলাই ওসোক। মানে নিমো। ওই বুড়াডাক আনিলে মানিমোনি। 

সর্বত্র হাসির পাত্র হিসেবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে বলে জানান, তিশার চাচী আর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, তিশার বয়স ১৮ বছর আর মুশতাকের বয়স ৭০ এটা কিভাবে সম্ভব। মুশতাক কেন আমার মেয়ের জীবন ধ্বংস করলো? কোটিপতি হলেও বুড়া মুশতাককে আমার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। আমার মেয়ের মাথা নস্ট করে দিছে। তিশা যদি দরিদ্র ঘরের কোন ছেলেকে বিয়ে করতো আমরা মেনে নিতাম। কিন্তু ওই বুড়াকে মেনে নিবো না। 

সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিলো যে মেয়েকে নিয়ে আজ সেই তাদের লজ্জার কারণ হয়ে দাড়ালো। লোকলজ্জার ভয়ে এখন বাড়ি থেকে বের হওয়াটাই যেন দায় হয়ে পড়েছে বলে জানান তিশার বড় চাচা মো: খায়রুজ্জামান। 

তিনি বলেন, তিশা ফিরে এলে পড়াশোনা করিয়ে উজ্বল জীবন দেয়ার চেষ্টা করব। বৃদ্ধ মুশতাকের সাথে থাকলে তিশা কি কখনো গর্ভবতী হতে পারবে? তিশাকে সে ফাঁদে ফেলে আটকে রেখেছে। তদন্ত করলেই সব বের হয়ে আসবে। আফ্রিকান কিছু অসভ্য জাতি ছিলো তাঁর মধ্যে মুশতাক একজন। 

তবে তিশাকে নয়, মুশতাককের সমালোচনায় করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের শিক্ষকরা। একই সাথে শঙ্কা আর হতাশা অভিভাকদের। তাদের প্রশ্ন স্কুলের অবুঝ মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা। আর কিভাবে বা বুঝবে কথায় ঘাপটি মেরে বসে আছে মুশতাকরা।

খন্দকার মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে গত ২২ জুন ঠাকুরগাঁও আদালতে মামলা করেন তিশার বাবা সাইফুল ইসলাম। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিশা ঠাকুরগাঁও আদালতে আসেন এবং স্বামী মুশতাক তাকে অপহরণ বা ধর্ষণ করেনি বলে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে সে আদালতের মাধ্যমে নিজ জিম্মায় স্বামী মুশতাক আহমেদের সঙ্গে ঢাকায় চলে যান।

   


পাঠকের মন্তব্য